বাগেরহাট প্রতিনিধি : আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ঠান্ডা গরমে বাগেরহাটে হঠাৎ করে শিশুরোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। প্রতিদিন নানা রোগে আক্রান্ত হওয়া শত-শত শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসছেন। বাগেরহাট সদর হাসপাতালের বর্হি:বিভাগে (আউটডোর) প্রতিদিন অন্তত দুই শতাধিক শিশু চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা যেসব শিশু বেশি অসুস্থ হচ্ছে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচেছ। রোববার সদর হাসপাতালে ৫৫ জন অসুস্থ শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। গত এক মাসে এখানে প্রায় ছয় হাজার শিশু চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। এরমধ্যে জ¤œগত কারনে ৫ জন শিশু মারা গেছে।

আশংকাজনক হারে রোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকদের এসব আক্রান্ত শিশুদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে আসন সংখ্যা (শয্যা) সীমিত হওয়ায় রোগীদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এতে করে রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। রোববার দুপুরে বাগেরহাট সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে এসব চিত্র।

শ্বাসকষ্ট,জ্বর, সর্দি, কাশি, খিচুনি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুরাই বেশি ভর্তি হচ্ছে। ১৫দিন বয়স থেকে দুই মাস বয়সী শিশুরাই এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঠান্ডা গরম আবহাওয়ার কারনে শিশুরা অসুস্থ হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করছেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে তারা আবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
হাসপাতালে আসা বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গজালিয়া গ্রামের গৃহবধূ সোনিয়া বেগম বলেন, এক মাস ১৪দিন বয়সী ছেলে আরাফাতকে গত ২৯ আগষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করেছি। গত এক সপ্তাহ আগে তার ছেলের ঠান্ডা লাগে। এরপর থেকে জ্বরের সঙ্গে তার কাশি হয়। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়ার পর সুস্থ না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করি। বর্তমানে সে সুস্থ হয়ে উঠেছে। চিকিৎসক ছেড়ে দিলে বাড়ি ফিরে যাবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

মুক্তা বেগম বলেন, জ্বর, সর্দি কাশিতে আক্রান্ত পাঁচ মাস বয়সী ছেলে স্বপ্নকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। ছেলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। হাসপাতালে বেড খালি না থাকায় মেঝেতে জায়গা হয়েছে। মেঝেতে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তারপরও ছেলেকে সুস্থ করতে বাধ্য হয়ে আরও কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। তিনি আসন সংখ্যা বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ জেষ্ঠ্য সেবিকা যুথিকা দেবনাথ বলেন, বাগেরহাট সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে মাত্র ১২টি বেড (শয্যা) রয়েছে। কিন্তু রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই ওয়ার্ডে ৫৫জন শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। আসন সংকুলান না হওয়ায় কোন আসনে তিনজন শিশুকে রাখা হয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় ভর্তি হওয়া অধিকাংশ শিশুদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। আর এসব আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসাসেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের সহকারী আলতাফ মাহমুদ বলেন, প্রতিদিন অন্তত দুই শতাধিক শিশুর অভিভাবক টিকিট সংগ্রহ করে হাসপাতালে সেবা নিতে আসেন। গত এক মাস ধরে শিশু ওয়ার্ডের রোগীর খুব চাপ বেড়েছে। গত এক মাসে প্রায় ছয় হাজার শিশু চিকিৎসাসেবা নিয়েছে।

বাগেরহাট সদর হাসপাতালের শিশু কনস্যালটেন্ট ডা: সৈয়দা রূখসানা পারভীন বলেন, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশি, খিচুনি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুরাই বেশি ভর্তি হচ্ছে। রোববার সকালে শিশু ওয়ার্ডে ৫৫জন শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। ১৫দিন বয়স থেকে দুই মাস বয়সী শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ঠান্ডা গরম আবহাওয়ার কারনে শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গত এক মাসে প্রায় ছয় হাজার শিশুকে এখানে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এসব আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। মা বাবার অসচেতনতার কারনে শিশুরা অসুস্থ হচ্ছে। এজন্য তিনি মা বাবাকে সচেতন হবার পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আসনের তুলনায় কয়েকগুন বেশি রোগী হওয়ায় শিশুদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসাসেবা দিতে আমরা বাধ্য হচ্ছি। তবে আক্রান্ত শিশুরা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

বাগেরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, শিশুদের ওয়ার্ডটিতে মাত্র ১২টি বেড রয়েছে। সম্প্রতি শিশুরোগ বেড়ে যাওয়ায় শিশু ওয়ার্ডে আসন সংকট দেখা দিয়েছে। তাই রোগীদের মেঝেতে থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে। এই মূহুর্তে আমাদের কিছু করার নেই। বাগেরহাট সদর হাসপাতালটি একশ শয্যা থেকে আড়াইশ শয্যায় উন্নিত হয়েছে। হাসপাতালের অবকাঠোমোর উন্নয়ন কাজ চলছে। সেটি শেষ হলে সব ধরনের রোগীকে বেডে রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে।

(একে/এএস/আগস্ট ৩১, ২০১৪)