হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের সাতছড়ির গহীন অরণ্যে আবারো অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। রবিবার ভোর থেকে আড়াইটা পর্যন্ত  র‌্যাব-৯ এর একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান চললেও কি কারণে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে তা জানা যায়নি। এদিকে নতুন করে তাদের অভিযানে ওই এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে টিপরাপল্লী।

স্থানীয় সুত্র জানায়, র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার মোছাব্বির এর নেতৃত্বে ভোরে সাতছড়িতে ৭টি গাড়ি আসে। র‌্যাবের ৫০ জন সদস্য দেশীয় অস্ত্র কোদাল, শাবলসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়ে স্থানীয় টিপরা পল্লীতে অভিযান চালায়। এ সময় পল্লীর সকল নারী শিশুদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পুরুষদের কেউ কেউ গা ঢাকা দেন। র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চলাকালে সাংবাদিকদের এর আশপাশেও যেতে দেননি।

এক পর্যায়ে জানানো হয় অভিযানের পরে প্রেসব্রিফিং করা হবে। সাংবাদিকরা যখন অপেক্ষা করছিলেন তখন এক ফাঁকে র‌্যাবের কর্মকর্তা ও সদস্যরা উদ্যানের একটি গোপন পথ দিয়ে গাড়ি উঠে পড়েন। সাংবাদিকরা তাদের কাছে অভিযান সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তারা কোন উত্তর না দিয়েই এলাকা ত্যাগ করেন। এসময় কর্দমাক্ত একটি ড্রাম পিকআপে নিতে যেতে দেখা যায়।

এদিকে টিপরা পল্লীর কয়েকজন নারী জানান, সকালে তারা এসেই আমাদেরকে তালা মেরে ঘর থেকে বের হতে বলেন। আমরা ঘর থেকে খাওয়া দাওয়া না করেই বের হয়েই বের হয়ে যাই। দুপুর ২ টা পর্যন্ত তারা একটি বাড়িতে খুড়াখুড়ি করেন। আমরা দেখতে চাইলে আমাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয়। তারা কোন কিছু পেয়েছে বলে মনে হয়না।

পল্লীর হেডম্যান চিত্ত দেববর্মার বাড়িতে যে ঘরটির নিচে র‌্যাব মাটি খুড়ে সেই ঘরে বিভিন্ন ক্রোকারিজ সামগ্রী পড়ে থাকতে দেখা যায়।


সাতছড়ির ব্যবসায়ী উপজেলার রসুলপুর গ্রামের নাছির জানান, গত বুধবার র‌্যাবের ৫টি গাড়ি আসে। তারা ওইদিন ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বনে অভিযান চালান। বৃহস্পতিবার আসে ৭ গাড়ি। সেদিনও বিকেল পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হয়। শুক্র ও শনিবার কোন অভিযান না চালালেও রবিবার আবারও অভিযান পরিচালনা করা হয়।

সাতছড়ি বিট কর্মকর্তা মাসুদ মোস্তফা র‌্যাবের অভিযানের কথা স্বীকার করেন। তবে তারা দীর্ঘ সময় সাতছড়ি বনে কি করেছে তা তিনি জানেন না বলে জানান।
র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার মোছাদ্দেক জানান, এটি রুটিন ওয়ার্ক। কিছু পাওয়া গেলে অবশ্যই মিডিয়া জানতে পারবে। তিনি ড্রাম পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন র‌্যাবের অভিযানের কথা জানেন বলে জানান। এব্যাপারে র‌্যাবকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তিনি নির্দেশ দেন। তবে কোন কিছু পাওয়া গেছে কিনা তা র‌্যাব জানায়নি বলে তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, ১ জুন রাত থেকে সাতছড়িতে দুই শতাধিক র‌্যাব সদস্য, ডগ স্কোয়াড ও বোমা বিশেষজ্ঞ দল নিয়ে অভিযান শুরু করে। একে একে আবিস্কার করে ১৫টি বাংকার। এসব বাংকার থেকে উদ্ধার করা হয় ২২২টি কামান বিধ্বংসী রকেট, ২৪৮টি রকেট চার্জার, ১টি রকেট লঞ্চার, ৪টি ৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার মেশিনগান, ৫টি মেশিন গানের অতিরিক্ত খালি ব্যারেল, ১২ দশমিক ৭ মিলিমিটারের ১৩শ’ ৭৬ রাউন্ড বুলেট, ৭ দশমিক ৬ মিলিমিটারের ১২ হাজার ৩০০ রাউন্ড বুলেটসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ। এ ঘটনায় র‌্যাব চুনারুঘাট থানায় দু’টি মামলা দায়ের করে। ১৯ জুন রাতে র‌্যাব আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের অভিযান স্থগিত ঘোষণা করে এবং গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রাখা হবে বলে জানানো হয়। পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় টিপরা পল্লীর জনজীবন। কিন্তু গত বুধবার থেকে র‌্যাব সাতছড়িতে আবারো অভিযান শুরু করে। এতে ওই এলাকায় আতংক বিরাজ করছে।

(পিডিএস/এএস/আগস্ট ৩১, ২০১৪)