রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : গোবিন্দভোগের পর এবার লন্ডনে যাচ্ছে সাতক্ষীরার হিমসাগর আম। সাতক্ষীরার ছয়ঘরিয়া গ্রাম থেকে ৪ মে’টন আম আজ রপ্তানী হচ্ছে। ধীরে ধীরে আরও আম বিদেশের বাজারে রপ্তানী হবে। তবে আমের দাম নিয়ে বরাবরের মত মনক্ষুণ্ন চাষিরা। 

সাতক্ষীরার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার ৫ হাজারেরও বেশি বাগানে আম চাষ হয়েছে। ৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার মে.টন। আর ৫০০ হেক্টর জমিতে গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আম চাষ করা হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয় সাতক্ষীরার আম বিদেশ যাত্রা। করোনার কারণে গতবছর বন্ধ থাকার পর এবারো আম জার্মানী, ফ্রান্স, ইটালিসহ বিদেশের বাজারে যাচ্ছে। বিদেশে আম রপ্তানীর টার্গেট রয়েছে ৫শ’ মে. টন।

মাটি ও আবহাওয়া অনুকুলে হওয়ায় অন্যান্য স্থানের তুলনায় আগেই বাজারজাত করা যায় সাতক্ষীরার আম। মাটির গুনে আমের স্বাদও ভাল। এসব কারণে দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সাতক্ষীরার আমের। ২০১৪ সাল থেকে সাতক্ষীরার আম রপ্তানী হচ্ছে বিদেশে। ইউরোপের ফ্রান্স, জার্মানী,ল ন্ডন, ইটালি,পর্তুগাল ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সাধারণত সাতক্ষীরার আম রপ্তানী হয় । গতবছর করোনার কারণে বিদেশে আম যায়নি।

একবছর বন্ধ থাকার পরে এবছর সাতক্ষীরার আম বিদেশে যাচ্ছে। গত ৮ মে ৫০০ কেজি গোবিন্দভোগ আম পরীক্ষামুলকভাবে জার্মানিতে রপ্তানি হয়। শুক্রবার থেকে লন্ডন ও ফ্রান্সে হিমসাগর আম পাঠানো শুরু হয়েছে। ৪ মে.টন আম সাতক্ষীরা থেকে যাচ্ছে। মেসার্স ইসলাম ট্রেডার্সসহ ৪টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরা থেকে আম কিনছে।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ও এফএও এর যৌথ কারিগরী সহায়তা দিচ্ছে সাতক্ষীরার বিশুদ্ধ আম উৎপাদনে। ৫শ’ আম চাষিকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদনে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে তারা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আর এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন স্থানীয় বে-সরকারি সংস্থা উত্তরণের‘ সফল প্রকল্প’ শুক্রবার রপ্তানীর উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরা ছাড়বে ৪ মে. হিমসাগর জাতের আম । তবে ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে আম বিক্রিতে খুশী নন চাষি। তারা বলছেন,রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করতে গেলে তাদের প্রচুর খরচ হয়।

এ প্রসঙ্গে ছয়ঘরিয়া গ্রামের আম চাষি হাফিজুর রহমান বলেন, সংস্থাগুলো প্রশিক্ষণ আমাদের দিয়েছে,এটা সত্য। তবে পরিচর্যা করতে যে খরচ, তাতে ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করলে আমার লাভ থাকবেনা।

তিনি আরও বলেন, পরিচর্যাকৃত আম প্রচুর পরিমাণে বাদ দেয় ক্রেতারা। ২০ মণ আমে কমপক্ষে ৭ মণ বাদ দেওয়া হয়। বাদ দেওয়া আমগুলো অনেক কমদামে বেচতে হয়। তিনি হিমসাগরের দাম মণপ্রতি ৩ হাজার টাকা দেওয়ার দাবি জানান।

তবে দামের বিষয়ে উত্তরণ প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইকবাল হোসেন জানান, বাইরে আম বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। আর বিদেশে রপ্তানীযোগ্য আমের চাষিরা দাম পাচ্ছেন ২ হাজার ৫০০ টাকা। এজন্য চাষিরা এই দাম পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ নন বলে দাবি করেন ইকবাল হোসেন।

সলিডারেড নেটওয়ার্কিং এশিয়ার প্রোগ্রাম অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমরা ৫০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। কিভাবে নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন করা যায়,প্রশিক্ষণটা মুলত সেখানে। আজকে ছয়ঘরিয়ায় হাফিজুর রহমানের বাগান থেকে আম পাঠানো হচ্ছে। ক্রেতা হলেন,তাসফিক ইন্টারন্যাশনাল ও এনএসবি কর্পোরেশন। তারা ইটালি ও লন্ডনে আমগুলো পাঠাচ্ছেন।

মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, শুধু ইউরোপের দেশগুলোই নয়,ইয়েমেন,বাহরাইন ও মালয়েশিয়াতেও সাতক্ষীরার আম যাবে। ২৭ মে থেকে ল্যাংড়া ও ৪ জুনের পর থেকে আ¤্রপালি আমও বিদেশে যাবে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম জানান,আমরা চাষিদের উত্তম কৃষি চর্চায় প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। কিভাবে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে,তার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। আহরণের আগে ১ মাসের মধ্যে কীটনাশক প্রয়োগ করা যাবেনা। বিষয়টিতে আমরা খুবই নজরদারিতে রাখি। এছাড়া আম পাড়ার পরে কোন রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা যাবেনা। সাতক্ষীরার আমে যাতে বদনাম না হয়,সেজন্য জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ একযোগে কাজ করছে বলে জানান নূরুল ইসলাম।

(আরকে/এসপি/মে ২১, ২০২১)