শিতাংশু গুহ


প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলাম নিগ্রহ ঘটনাটি দুঃখজনক। এতে মিডিয়ার দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পেয়েছে। দেশের বিচার বিভাগ আগেই ধ্বংস হয়েছে। মিডিয়া গেছে। জনপ্রতিনিধিরা জনবিচ্ছিন্ন, সরকার আমলা নির্ভর। রোজিনার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। তাঁর গাঁয়ে হাত দেয়া হয়েছে। তাঁকে গলাচেপে ধরা হয়েছে। তাঁকে হেনস্তা করা হয়েছে। এটি রোজিনার গলাচেপে ধরা নয়, মিডিয়ার কণ্ঠরোধ। ওয়াশিংটন পোষ্ট নিউজ করেছে। জাতিসংঘ প্রতিবাদ করেছে। বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, এঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। বাংলাদেশে সাংবাদিকরা একটু-আধটু প্রতিবাদ করেছেন, খুব বেশি করার সুযোগ নেই, কারণ সরকারকে ‘নাখোশ’ করা যাবেনা, তাই মেমোরেন্ডাম দেয়া বা মন্ত্রীর সাথে দেখা করাই একমাত্র রাস্তা।

রোজিনা জনস্বার্থে তথ্য সংগ্রহ করতে সচিৰালয়ে গেছেন। তথ্য চুরি করতে যাননি। তথ্য পেলে হয়তো তা প্রকাশ করতেন। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে নয়। শোনা যায়, রাশিয়ার সাথে করোনা ভ্যাকসিন সংক্ৰান্ত ডক্যুমেন্ট তিনি দেখছিলেন। মিডিয়ায় এসেছে, রাশিয়া সরকার-সরকার চুক্তিতে আগ্রহী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মধ্যস্থকারী রাখতে আগ্রহী। প্রশ্ন হলো, মধ্যস্থকারী কেন? রোজিনা হয়তো কোন নিউজের ক্লু খুঁজতে সচিবালয়ে যান। তিনি যে কক্ষে ডক্যুমেন্ট দেখছিলেন, সেখানে তিনি একা থাকেন কিভাবে? ভাগ্য ভালো যে তাঁকে সাগর-রুনীর ভাগ্য বরণ করতে হয়নি। ইতিমধ্যে তিনি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। সামনে হয়তো পুরুস্কার-টুরুস্কার পাবেন?

প্রশাসন ও মিডিয়াকে খুশি রাখতে হয়তো রোজিনা মুক্তি পাবেন, হয়তো মামলা প্রত্যাহার হবে। সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তারা বদলী হয়েছেন। স্বাস্থ্য সচিব জেবুন্নেছা’র সম্পত্তির খোঁজখবর মানুষ জেনেছে। এবার হয়তো রোজিনা’র বিস্তারিত জানা যাবে। ইতিমধ্যে বান্ধবী ও তাঁর বাবার কথোপকথন মানুষ জেনেছে; কোটি টাকা অগ্রিম ভিডিও দেখেছে। এ ঘটনায় একটি লাভ হয়েছে, মন্ত্রীরা কিছুদিন বলবেন না যে, ‘বাংলাদেশে মিডিয়ার স্বাধীনতা বিশ্বে অনন্য নজীর। ভবিষ্যতে এঘটনা রেফারেন্স হিসাবে আসবে। বাংলাদেশে দু’টি মিথ্যা প্রায়শ: উচ্চারিত হয় (১) দেশে মিডিয়া ও বিচার বিভাগ স্বাধীন (২) বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দু’টোই ডাহা মিথ্যা, শুধু বলার জন্যে বলা!

রোজিনা ইস্যুতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য হাস্যকর। মন্ত্রী হলেই কি আবোলতাবোল বলতে হয়? বছরখানেক আগে রোজিনা একটি রিপোর্ট করেছিলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপস্থিতেই রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি’ -কারো কারো মতে ‘এজন্যেই কি রোজিনা জেলে’? তবে তার বিরুদ্ধে মামলাটি বেশ শক্ত। তাঁর স্বামী ঠিকাদার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসা আছে, রোজিনা সহায়তা করেছেন, তিনি যে ‘ধোয়া তুলসীপাতা’ তা নয়! সরকারের মতিগতি বোঝা যাচ্ছেনা, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ইতস্তত: করছেন। রোজিনা সম্ভবত: দুইবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে নিউইয়র্ক এসেছেন। তাঁর স্বামী যুবলীগ নেতা। পুরো ঘটনা কি ‘সেইমসাইড’? আপাতত: অপেক্ষার পালা, দেখা যাক কি হয়, এরমধ্যে অন্য ইস্যু এসে পড়লে ‘রোজিনা ইস্যু’ চাপা পরে যাবে।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।