স্টাফ রিপোর্টার : বিচারপতিদের অভিশংসন (অপসারণ) আইন পাসের আগে বিএনপির মতামত চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

তিনি বলেন, এ পাসের ক্ষেত্রে সংসদের ভেতরে ও বাইরে যারাই আছেন তাদের সকলের মতামত চাওয়া হবে।

সোমবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে বঙ্গবন্ধু অ্যাকাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, কেউ যদি সংসদীয় কমিটির কাছে এসে মতামত দিতে চায়, তাও নেওয়া হবে। তবে এসব মতামত গ্রহণ করা হল কি হল না সেটা বড় কথা নয়। মতামত নেওয়াটাই বড় কথা।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তন করে জিয়াউর রহমান যে ভুল করেছিল, এখন ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সেটাকে দূর করা হবে।

তিনি বলেন, পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তন করে জিয়াউর রহমান সংবিধানকে বিকলাঙ্গ করেছিল। আর এখন ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিকলাঙ্গ সংবিধানকে ঠিক করা হচ্ছে।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আমি সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে বিচারপতিদের অভিশংসন আইনটি আমার কাছে আসবে। যারা সংসদে নেই আমি তাদেরও ডাকবো। তারা তাদের মতামত দিতে পারবে। বিএনপিও চাইলে তারা এতে মতামত দিতে পারবে। সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলকেও ডাকবো। তাদের মতামত নেওয়া হবে। তবে তাদের মতামত গ্রহণ করা হলো, না বর্জন করা হলো এটা বড় কথা নয়। এই মতামত রেকর্ড করা হবে এবং সংসদীয় কমিটির কাছে থাকবে। শতবর্ষ পরেও কেউ দেখতে চাইলে পাবেন।

তিনি বলেন, বিচারপতিদের অভিশংসন নিয়ে এখন যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে, এটা চায়ের কাপে ঝড় তোলার মত। এ আইনটি নতুন নয়, এটা ৭২ এর সংবিধানেও ছিল। জিয়া সামরিক আইন দিয়ে এই আইনটি পাকিস্তানের আদলে পরিবর্তন করেছিল। আমরা ওটাই ফিরিয়ে আনছি। এটা গতবার একসঙ্গে নিয়ে আসলেই হত। তাহলে আর এখন মাতামাতি হত না। তারপরও এখন আনছি এটাই বড় কথা। বিলম্বে হলেও সঠিক কাজটি করা হচ্ছে।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বিচারপতিদের অভিসংশনের জন্য সংবিধান সংশোধন করলেই হবে না। এর জন্য আরেকটি আইন লাগবে। ওই আইনটি পাশ হলে এখন যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও সংশয়ের কথা তারা বলছে, এটা থাকবে না। এই সংশোধনী হলে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার আইনের উর্ধ্বে নয়, তারা আইনের লঙ্ঘন করলে বা অসদাচরণ করলে তার ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। তেমনি বিচারপতিদের জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘সরকারে আর আমাদের মন্ত্রী রাখবো না’ এমন বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, এরশাদ ও রওশন এরশাদের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। এটা করলে সংসদীয় গণতন্ত্র রক্ষা পাবে। তারা দেশের প্রকৃত বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হবে। দেশের মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করবে। তখন রাস্তার বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি হালে পানি পাবে না।

১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় জয়ী হওয়ার জন্য দায়ী কারা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন মানলে নির্বাচন কমিশন মানতে হবে। তারা মানেনি। ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার জন্য সরকারি দল যতটা না দায়ি তার চেয়ে বেশি দায়ি বিএনপি। নির্বাচনের অংশ না নেওয়াটা তাদের রাজনৈতিক ভুল। এই ভুলের মাশুল তাদের দিতে হচ্ছে।

কৃষকলীগের অর্থ সম্পাদক নাজির মিয়ার সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ফয়েজ উদ্দিন মিয়া, সাম্যবাদী দলের নেতা হারুণ চৌধুরী প্রমুখ।

(ওএস/×এটিআর/আগস্ট ০১, ২০১৪)