লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা নদীতে পাট জাগ দেওয়ার ফলে নদীর পানি পচে দুর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে। স্বচ্ছ, টলটলে নবগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হয়ে কালো বর্ণ ধারন করেছে। ফলে, নদী তীরবর্তী এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। পানি পচে যাওয়ায় দেশীয় প্রজাতির মাছ আধমরা অবস্থায় ভেসে উঠছে। এসব আধমরা মাছ ধরার জন্য জেলেদের পাশাপাশি এক শ্রেণির শৌখিন মাছ শিকারীরা দিনে ও রাতে ’কোচ’ নিয়ে নদীর এপাড়-ওপাড় চষে বেড়াচ্ছেন। বদলে গেছে নদী পাড়ের দৃশ্যপট।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে,এক সময় লোহাগড়ার পাট চাষিরা খাল-বিল,ডোবা নালায় পাট জাগ দিতো। সে সময় চাষীদের পাট জাগ দেওয়ার জন্য আর যাই হোক, নদীতে আসতে হতো না। কিন্তু সাম্প্রতিক বছর গুলোতে সময় মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খাল-বিল, ডোবা-নালায় পানি থাকে না। ফলে, পাট চাষীরা ব্যাধ্য হয়েই নবগঙ্গা নদীতে পাট জাগ দিয়ে আসছেন। নদীতে পাট জাগ দেওয়ার কারনে পানি দূষিত হয়ে তা ব্যাবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর পাট চাষ মৌসূমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ার কারনে লোহাগড়ায় ১০৫২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ৯৫৫০ হেক্টর জমিতে। পরবর্তীতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ অঞ্চলের চাষীরা পাট চাষে ঝুঁকে পড়ায় পাটের আবাদ ভালো হয়েছে।

এ অঞ্চলের পাট চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে পাট চাষীরা জমির কাটা পাট নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছেন। অনেক চাষী পানির অভাবে জমি থেকে পাট কাটছেন না। ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ার দরুন খাল-বিল, ডোবা-নালায় পানি নেই বললেই চলে। অধিকাংশ পাট চাষীরা তাই বাধ্য হয়েই নবগঙ্গা নদীতে পাট জাগ দিতে বাধ্য হয়েছেন।

নবগঙ্গা নদীর ২৫ কিলো মিটার জুড়ে পাট জাগ দেওয়া হয়েছে। নলদী ত্রি মোহনা থেকে লুটিয়া এলাকা পর্যন্ত নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। নদীতে পাট জাগ দেওয়ার ফলে এ বছরও নদীর পানি পচে দুর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে। নদীর পানি দূষিত হওয়ার কারনে নদী তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ নদীর পানি ব্যবহার করছেন না। অপর দিকে, নদীর পানি পচে দূষিত হওয়ার কারনে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ আধমরা অবস্থায় ভেসে উঠছে। নবগঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতা আব্দুল হাই সরদার বলেন, কৃষকের অসচেনতা এবং কৃষি বিভাগের উদাসীনতায় নবগঙ্গা আজ দুষণের কবলে পড়েছে। দুষণরোধে এলাকাবাসীদের সচেতন হতে হবে।

নবগঙ্গা নদীতে পাট জাগ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, পাট যেহেতু অর্থকারী ফসল, সেহেতু পাট নষ্ট করা যাবে না। রিবন রের্টিং পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে কৃষকরা বাধ্য হয়ে সনাতনী পদ্ধতিতে পাট জাগ দিয়ে আসছে। নদী দুষণ বন্ধে আপাতত কৃষি বিভাগের কোনো নিদের্শনা নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোকতার হোসেন বলেন, সমন্বয় কমিটির সভায় নদীতে পাটজাগ বন্ধে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

(আরএম/এএস/সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৪)