সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাতক্ষীরা জেল গেট থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এক সপ্তাহ নিখোঁজ থাকা ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে  সংবাদ সম্মেলন করেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলা গ্রামের ধীরেন্দ্র নাথ হাজরার স্ত্রী স্বর্ণলতা হাজরা।



সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে স্বর্ণলতা হাজরা বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার স্বামী সেনাসদস্য ধীরেনন্দ্র নাথ হাজরা মারা যান। তারা দেশে ফিরে নিজ জায়গায় বসতবাড়ি নির্মাণ করতে চাইলে ভারতীয় শরনার্থী ইয়াকুব আলী ও তার ছেলেরা বাধা দেয়।

একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তারা নিজ জমি দখলে নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

একপর্যায়ে জাল ডিক্রীর মাধ্যমে জমি দাবি করায় তিনি আদালতে দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন। মামলার সকল রায় তার (স্বর্ণলতা) পক্ষে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, আদালতের রায় বিপক্ষে যাওয়ায় প্রতিপক্ষ ইয়াকুব আলীর ছেলেররা তাকে তিন বার বাড়িতে ধরে নিয়ে যেয়ে আম গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন।মেঝ ছেলে মহীতোষ স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এরপর থেকে মহিতোষের উপর প্রতিপক্ষরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হামলা মামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি শুরু করে।

হয়রানির অংশ হিসেবে নবম সংসদীয় নির্বাচনে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ২০ মে কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে আসে। পরের দিন তাকে সাতক্ষীরা সদর থানার বিচারাধীন ডাকাতি মামলায় চালান দেয়। পরে তাকে বিচারাধীন ধানদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান চঞ্চল হত্যা মামলাসহ একে একে এজাহার বহির্ভুত ১৬টি মামলায় চালান দেওয়া হয়। এ সবের মধ্যে পাঁচটি মামলা খালাস হয়ে গেছে। অপর সব ক’টি মামলায় সে জামিনে রয়েছে। মহিতোষ গ্রেফতার হওয়ার কয়েকদিন পর তাদের ১০ কাঠা জমি দখল করে নেয় প্রতিপক্ষ ইয়াকুব আলীর ছেলেরা।

গত ২৬ আগষ্ট সন্ধ্যা ৬টার দিকে মহিতোষ জেল গেট থেকে বের হবে বলে মেয়ে ছন্দাও শুভাকাঙ্খী বসির আহম্মেদকে নিয়ে তিনি জেল গেটে যান।এসময় জেলখানার প্রধান ফটক থেকে বের হওয়ার পরপরই মহিতোষকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সশস্ত্র চারজন একটি প্রায় সাদা রঙের প্রাইভেটকারে তোলে। গাড়িতে তোলার সময় মহিতোষ মা বলে চিৎকার দিলে তার মুখ চেপে ধরা হয়। গাড়িটি জেল গেটের বাইরে আসলে দু’টি গাড়িতে থাকা পুলিশসহ ওই মাইক্রোবাসটি সাতক্ষীরার দিকে চলে আসে। এরপর থেকে পুলিশ, র‌্যাব ও জেলা প্রশাসনে ধন্যা দিয়েও মহিতোষের সন্ধান মেলেনি। প্রতিপক্ষরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মহিতোষকে হত্যা বা গুম করার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।

গত ৩১ আগষ্ট সকালে মোবাইলে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মহীতোষের সঙ্গে একটি বাংলা লিঙ্কের সিম থেকে কথা বলিয়ে মাসেজ করে পাঠানো একটি বিক্যাশ নম্বরে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়। বিকেলেও একই নম্বার থেকে টাকা চাওয়া হয়। নইলে বড় স্যার রাতে কি করবেন তা তিনি বলতে পারবেন না বলে জানানো হয়। সোমবার সকালেও একই নম্বরে মেয়ে ছন্দা কথা বলে মহিতোষের অবস্থান যানতে চাইলে অফিসে না যেয়ে তিনি জানাতে পারবেন না বলে জানান।

সংবাদ সম্মেলনে ছেলে মহিতোষকে দ্রুত জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্কক্ষেপ কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিখোঁজ মহিতোষের বোন ছন্দা হাজরা।
এ ব্যাপারে ছাতিয়ানতলা গ্রামের রবিউল ইসলাম মোবাইল ফোনে আজমল হোসেন, তার ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুলিশের খাতায় মহিতোষ একজন সন্ত্রাসী। সে জেল থেকে বের হয়ে কখন, কবে ও কোথায় গেছে এটা তাদের জানা নেই।

সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক একেএম আমজাদুল হক জানান, তাদের বিরুদ্ধে জেল গেট থেকে ২৬ আগষ্ট সন্ধ্যায় মহিতোষ নামের কোন ব্যক্তিতে আটক করার অভিযোগ ঠিক নয়।

(আরকে/এএস/সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৪)