বগুড়া প্রতিনিধি : নারী নির্যাতন বন্ধ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে  করোনাকালে কর্মহীন নারীদের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পুনর্বাসন করার জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবিতে বগুড়ায় মানববন্ধন-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

মঙ্গলবার (০১ জুন) বারোটায় বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম বগুড়া জেলার উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন-সমাবেশ শেষে বগুড়া জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী বরাবর দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দেওয়া হয়। উক্ত মানববন্ধন -সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম বগুড়া জেলার আহ্বায়ক দিলরুবা নূরী।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ জেলা আহ্বায়ক অ্যাড. সাইফুল ইসলাম পল্টু, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা নেতা রাঁধা রানী বর্মন, রেনু বালা, আকলিমা বেগম, তাহমিনা আক্তার অ্যানি প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম সংগঠক নিয়তি সরকার নিতু।

সমাবেশের সভাপতি দিলরুবা নূরী বলেন, "আগামী ৩ জুন সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে । নারীর শ্রমের স্বীকৃতি ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাজেট বিশেষ ভূমিকা রাখবে। করোনা মহামারীর মধ্যে গত ১৪ মাসে কর্মহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য নারী। আগামী অর্থ বছরও হয়তো করোনাকে সাথে নিয়েই কাটাতে হবে। বাজেটে সেসব বিবেচনাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। করোনা কালে বৃদ্ধি পেয়েছে বাল্য বিবাহ, বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। এসব থেকে প্রতিয়মান হয়, নারীর জীবনে পারিবারিক নির্যাতন এবং সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা চরম আকার ধারন করেছে। গৃহশ্রমিক, বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকাসহ বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্র থেকে ছাটাই বা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন নারীরা। এই সকল সংকট উত্তরণে নগদ সহায়তাসহ বিশেষ বরাদ্দ সময়ের দাবি। সেইসঙ্গে গৃহস্থালী কাজের আর্থিক মূল্য জিডিপিতে অন্তর্ভূক্ত করে নারীর শ্রমের মূল্যায়ন করতে হবে।”

অ্যাড. সাইফুল ইসলাম পল্টু বলেন, “গৃহস্থালী কাজের মাধ্যমে নারীরা পরিবারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। গৃহে নারীরা প্রতিদিন গড়ে ১৬ ঘণ্টায় প্রায় ৪৫ ধরনের কাজ করে থাকেন। সিপিডি (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ)-এর গবেষণায় দেখা যায়, নারীদের গৃহস্থালী কাজের আর্থিক মূল্য ১১লক্ষ কোটি টাকারও উপরে। এর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত করে নারীর মর্যাদা দেয়া জরুরী।”

রাঁধা রানী বর্মন বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানোর পরও নারীর গৃহস্থালির কাজের আর্থিক মূল্য হিসাবে রাষ্ট্রীয় কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। নারীদের গৃহস্থালির কাজের অবদানের মূল্যায়ন না হওয়ায় নারীরা তার প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়, নির্যাতন-বৈষম্যের শিকার হয়। নারীর শ্রমের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী ও নারীদের সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনে রাষ্ট্র বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। রাষ্ট্র নারীদের শ্রমের মূল্যায়ন করার মধ্য দিয়ে তার কাজের স্বীকৃতি দিতে পারে। সাথে সাথে একটি থোক বরাদ্দের ব্যবস্থা রাখতে পারে গৃহিনীদের জন্য। স্বামীর সংসারে নির্যাতিত নারী বা বিধবা অসহায় নারীদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাবে পুনর্বাসনের জন্য এই তহবিল কাজে লাগাতে হবে।”

অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে দাবি গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নারী নির্যতন বন্ধ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া, করোনাকালে কর্মহীন নারীদের পুনর্বাসন, সকল নগর ও পৌর এলাকায় সরকারিভাবে ডে-কেয়ার সেন্টার চালু, শহরে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক গণপরিবহণের ব্যবস্থা, নারীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, প্রতি উপজেলায় সরকারিভাবে নারী হোস্টেল নির্মাণ, প্রত্যেক জেলা সদর হাসপাতালে মাতৃসদন কেন্দ্র নির্মাণ, নির্যাতিত নারীদের চিকিৎসার জন্য ওসিসি চালু।

(আর/এসপি/জুন ০১, ২০২১)