গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : আজ ২ সেপ্টেম্বর সেন্ট মথুরানাথ বোসের ১১২তম মৃত্যু বাষির্কী। অশিক্ষা আর কু-সংস্কারের বিরুদ্ধে যে মানুষটি আজীবন লড়াই করে গেছেন, দেশের মানুষ তথা গোপালগঞ্জবাসী আজ তাকে ভুলতে বসেছে। তার সমাধী সৌধটিও আজ অবহেলিত। গোপালগঞ্জের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসতে তাঁর ভুমিকা ছিল অপরিসীম। মথুরানাথ ছিলেন এ অঞ্চলের শিক্ষার অগ্রদূত, সমাজ সংস্কারক ও ভাটির মানুষের আশার আলো।

প্রায় দেড়’শ বছর আগে এ অঞ্চলটি ছিল জলাভূমি ও প্লাবণ এলাকা। আদিবাসীদের প্রায় সবাই ছিল নিম্ন বর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। এরা সবাই ছিল গরীব ও অশিক্ষিত। দশ গ্রামের মধ্যে নাম স্বাক্ষরকারী কাউকে পাওয়া যেত না। অতিদরিদ্র, অনুন্নত ও অশিক্ষিত মানুষের মুক্তির বার্তা পৌঁছে দিতে কলকাতার ভবানীপুরের লন্ডন মিশনারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরী ছেড়ে ১৮৭৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রথমে নৌকা যোগে গোপালগঞ্জ পৌঁছান। শুরু করেন নিরক্ষর মানুষকে জাগিয়ে তোলার কাজ। গড়ে তোলেন শিক্ষাঙ্গণ, ভজনালয়, কোর্ট, পোষ্ট অফিস, হাইস্কুল, ব্যাংক, হাসপাতাল ও কৃষি খামার। অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে থেকে হয়ে ওঠেন তাদের বন্ধু।

মথুরানাথ বোস এ অঞ্চলের শিক্ষার আলো বঞ্চিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে জ্ঞানের অর্ণিবাণ শিখা প্রজ্বলিত করেন। রেভারেন্ড জে এল সরকারের বাসভবনের কাছে ছেলেদের জন্য তিনি প্রথম একটি পাঠশালা স্থাপন করেন। পাঠশালাটি পরে প্রাইমারী মিশন থেকে হাইস্কুলে উন্নিত করা হয়। পরে এই মিশন হাইস্কুলের নাম তার নামানুসারে এমএন ইনস্টিটিউট রাখা হয়।

এই মহান পুরুষ ১৯০১ সালের ২রা সেপ্টম্বর ৫৮ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন। কিন্তু যে মানুষটির আপ্রাণ চেষ্ঠায গোপালগঞ্জ শহরের বিকাশ; সেই মহাপ্রান সেন্ট মথুরানাথের নাম আজ গোপালগঞ্জ বাসীর কাছে বিস্মৃত প্রায়। নতুন প্রজন্ম তাঁর কথা জানে না। কেউই তাঁর কথা এখন আর স্মরণ করে না। তারই প্রতিষ্ঠিত মিশন হাইস্কুলের (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কলেজ) মাত্র বিশ গজ দূরে পুরানো লঞ্চ ঘাট এলাকায় তাঁর সমাধী সৌধটি পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়।

গোপালগঞ্জ এজি চার্জ গীর্জার পালক অনুকুল বিশ্বাস বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে ছাত্র ছাত্রীরা উচ্চতর ডিগ্রী নিচ্ছে। কিন্তু, তার মৃত্যু বা জন্ম দিবস পালন হয় না এ সব প্রতিষ্ঠানে। আর সমাধী সৌধটি আজও অবহেলায় পড়ে রয়েছে। তবে এ বছর খ্রীষ্টান ফেলোশিপের উদ্যোগে মৃত্যুদিবস পালন উপলক্ষে সমাধী সৌধে মাল্যদান, শোক র‌্যালী, প্রার্থনা ও আলোচনাসভার আযোজন করা হয়েছে।

এ কৃত্তিমান পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন যাতে সরকারীভাবে পালন করা হয় এ দাবী এ অঞ্চলের মানুষের।

(এমএইচএম/এইচআর/সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৪)