মাঈনুল ইসলাম নাসিম : বহু বছর ধরে দুবাই বা মধ্যপ্রাচ্যের পথে-প্রান্তরে বাংলাদেশের নাগরিকদের সততার সংবাদ ফলাও করে প্রচার হয়ে আসলেও সাম্প্রতিককালে রোম বা নিউইয়র্কেও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশির সততার বিরল দৃষ্টান্ত বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় দূর প্রবাসে সবশেষ আলোকবর্তিকাটি প্রজ্জ্বলন করলেন বাংলাদেশের আরেক কৃতি সন্তান লস এঞ্জেলেস প্রবাসী কাজী মশহুরুল হুদা। ইস্টারের রাতে নগদ ৫ হাজার ডলারসহ একটি অস্ট্রেলিয় পাসপোর্ট কুড়িয়ে পেয়ে সসম্মানে সব ফিরিয়ে দিয়ে অবাক করে দিয়েছেন যিনি হারিয়েছেন তাঁকে সহ তাঁর সঙ্গী-সাথীদের।
পাঠক, ছবি দেখেই হয়তো অপনারা অনেকেই এই গুণীজনকে চিনতে পেরেছেন ইতিমধ্যে। হাঁ, একজন সেলিব্রেটি হয়েও মাটির মানুষ তিনি। শিল্পী পরিচয় নিয়ে যথারীতি ভালোবাসেন মা-মাটি-মানুষ ও দেশকে। লাল-সবুজ পতাকার ভাবমূর্তি বিদেশ বিভুঁইয়ে সমুজ্জ্বল করতে প্রবাসে পরীক্ষিত সৎ বাংলাদেশির তালিকায় নাম লেখালেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মূকাভিনেতা কাজী মশহুরুল হুদা। ‘মাইম এ্যাম্বেসেডার’ হিসেবে ইতিমধ্যে তাঁর খ্যাতি পৃথিবীর নানা প্রান্তে।

২১ এপ্রিল এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় কাজী মশহুরুল হুদা বর্ণনা দিচ্ছিলেন ওয়েস্ট হলিউডে সেদিন রাতে যা ঘটেছিল। ইস্টারের ছুটিতে একদল পর্যটক লস এঞ্জেলেসে বেড়াতে এসেছেন সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে। ১৯ এপ্রিল শনিবার রাতে জমিয়ে আড্ডা দেয়ার এক পর্যায়ে যখন তাঁরা উঠে যাচ্ছিলেন তখন তাদের মধ্যে এক মহিলা ভুলে ফেলে যান তাঁর ভ্যানেটি ব্যাগটি। এনজয় করতে গিয়ে ভদ্রমহিলা সম্ভবত একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছিলেন। চলার পথে ঘটনাক্রমে পুরো বিষয়টি দৃষ্টির আড়াল হয়নি তথন ‘মাইম আর্টিস্ট’ কাজী মশহুরুল হুদার। ভুলে ব্যাগ ফেলে রেখেই প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যান তাঁরা।
কাজী মশহুরুল হুদা ব্যাগটি তুলে নিয়ে ভেতরে দেখতে পান নগদ ৫ হাজার ডলার, সেই সাথে অস্ট্রেলিয় সেই পাসপোর্ট। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, যে করেই হোক ব্যাগের মালিককে খুঁজে বের করা চাই। ভিড়ের মাঝেই অনেকক্ষণ হন্যে হয়ে খোঁজার পর দেখতে পেলেন সেই মহিলা উন্মাদের মতো ছুটোছুটি করছেন হারিয়ে যাওয়া ব্যাগের খোঁজে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি যখন ব্যাগটি মহিলার হাতে তুলে দিলেন, তখন সবার কাছেই গোটা বিষয়টি পুরোপুরি অবিশ্বাস্যই মনে হচ্ছিল।
‘বাংলার অহংকার’ এই মূকাভিনেতার দিকে বিস্ময় ভরা চোখে ভদ্রমহিলা বেশ কিছুক্ষণ এমনভাবে তাকিয়ে রইলেন যেন ‘‘পড়ে না চোখের পলক …’’। অনেকটা ‘হারানো মানিক’ ফিরে পেয়ে তাই বলেই বসলেন, ‘‘কেন তুমি ফিরিয়ে দিলে আমার এই মহামূল্যবান ব্যাগ ?’’ মাইমের চেয়েও সাবলীল জবাব। শুরুটা পাল্টা প্রশ্ন দিয়ে, ‘‘কেনো ফিরিয়ে দেবো না ? এটাতো তোমার কাছেই ছিলো, আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। লস এঞ্জেলেসে ইস্টারের ছুটির দিনগুলো তোমার আনন্দে ভরে উঠুক !’’ ভ্রমণে নতুন করে প্রাণ ফিরে পেলেন অস্ট্রেলিয় সেই পর্যটক, কৃতজ্ঞতায় তাই বিদায় বেলায় সশ্রদ্ধ উচ্চারণ ‘‘গড ব্লেস ইউ’’।

(এএস/এপ্রিল ২২, ২০১৪)