রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় শনিবার থেকে শুাং হচ্ছে জেলা ব্যাপী কঠোর লকডাউন। লকডাউন বাস্তবায়নে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে প্রশাসন। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় মারা গেছেন ২ নারী। করোনা সন্দেহে মারা গেছেন আরও ২জন। 

জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান,জেলায় করোনা সংক্রমণ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ৪টা জুন মধ্যরাত থেকে ১১ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত জেলাব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

বিধি-নিষেদ চলাকালিন সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রোগী পরিবহনকারী এ্যাম্বুলেন্স,জাংরী পণ্য বহনকারী ট্রাক এবং জাংরী সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবেনা। ঔষদের দোকান ব্যতীত সকল ধরণের দোকানপাট,শপিংমলসমূহ বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সাপ্তাহিক হাট ও গরুর হাট।

কাঁচাবাজার ও নিত্য প্রয়োজনীয় (মুদিখানা) পণ্যের দোকানপাট,খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সকাল ০৯.০০ টা থেকে দুপুর ১২.০০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোরা থেকে কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ করা যাবে। হোটেল-রেস্তোরায় বসে কেউ খেতে পারবেন না।
সাতক্ষীরায় আমের এখন ভরা মৌসুম। শত-শত ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম আমের আড়ৎসহ হাট-বাজার ও আমবাগান। আমের বিষয়ে কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, আমের আড়ৎ/বাজার পৃথক জায়গায় ছড়িয়ে আড়তদারদের মাধ্যমে বিক্রয় করা যাবে। বাগান থেকে আম ট্রাকে করে পাঠানো যাবে। এছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম পরিবহন চালু থাকবে।

তিনি আরও বলেন,শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা ও জরুরী পরিষেবা যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টীকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দরসমূহের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি, বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরী ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

মসজিদে নামাজ পড়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, জাতীয় ঘোষণা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুম্মার নামাজসহ প্রতি ওয়াক্ত নামাজে সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করতে পারবেন। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সমসংখ্যক ব্যক্তি উপাসনা করতে পারবেন।

ভোমরা স্থল বন্দরের সকল দোকান বন্ধ থাকবে। তবে ভোমরা স্থল বন্দরের কার্যক্রম সকাল ৮.০০টা হতে বেলা-০২.০০টা পর্যন্ত চালু থাকবে। এছাড়া শহর ও গ্রামে সকল প্রকার যানবহনের পাশাপাশি মোটরসাইকেল চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।

এসব বাস্তবায়নে শনিবার থেকে জেলাজুড়ে ১৮টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হবে। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে দু’টি করে এবং জেলা পর্যায়ে ৪টি মোবাইল টিম মাঠে থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

সাতক্ষীরার সাথে যশোর ও খুলনার সড়ক যোগাযোগে পয়েন্টগুলিতে পুলিশ চেকপোষ্ট থাকবে। এ সময় জেলার সীমান্তে পারাপার বন্ধ থাকবে।

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলার প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ২৪ ঘন্টাই পুলিশ চেকপোস্টগুলোতে সক্রিয় থাকবে। এছাড়া পুলিশ জেলার সর্বত্র টহলরত থাকবে। লকডাউনের জন্য ঘোষিত বিধি-নিষেদ অমান্য করা হলে,তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।

এদিকে সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় ২জন নারীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া করোনা সন্দেহে মারা গেছেন আরও দু’জন।

করোনায় মারা যাওয়া নারীরা হলেন, সদরের মুকুন্দপুর গ্রামের ইমরান মোড়লের স্ত্রী আয়েশা খাতুন (৩৬) ও শ্যামনগর উপজেলার রঘূনাথপুর গ্রামের মফিজুল ইসলামের স্ত্রী শাহিনা খাতুন (৩৫)। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তারা ২রা জুন সকালে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। বৃহস্পতিবার ভোরে তারা মারা যান।

জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। শতকরা হিসেবে যা ৫২ শতাংশ। এর আগের দিন আক্রান্তের শতকরা হার ছিল ৫৩ শতাংশ।

বর্তমানে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩২ জন ও সদর হাসপাতালে ২০জন করোনায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। ১৯৩ জন রয়েছেন ওেহাম কোয়ারেন্টাইনে। এছাড়া অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতাল ও নিজ বাড়িতে প্রায় ৩০০ জন আইসোলেশনে আছেন।

(আরকে/এসপি/জুন ০৪, ২০২১)