উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেঙ্গারচর বাজারস্থ সুরুজ প্লাজায় ‘ছেঙ্গারচর জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সে’ গাইনী সার্জন চিকিৎসক ছাড়াই সিজারিয়ান অপারেশন চলছে। অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (৮ জুন) ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায় হাসপাতালটিতে।

ভ্রাম্যমাণ আদালত ছেঙ্গারচর জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সের মালিক কুলসুমা আক্তার সুমনাকে এক বছরের কারাদণ্ড ও অভিযুক্ত হাসপাতাল সিলগালা করে দিয়েছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজা হাবিব শাপলা। সাথে উপস্থিত ছিলেন মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নুসরাত জাহান মিথেন।

সোমবার বেলা ১টায় ছেঙ্গারচর জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সে গিয়ে জানা গেছে, ওইদিন তিনজন রোগীকে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়েছে। এরা হলেন : উপজেলার দশানী গ্রামের মন্টু সরকারের স্ত্রী নাজমা, হাশিমপুর গ্রামের আব্দুল কাদিরের স্ত্রী মনিরা আক্তার ও উত্তর ছেঙ্গারচর গ্রামের উজ্জল প্রধানের স্ত্রী জুলিয়া। তাদের প্রসবজণিত ব্যথা উঠলে স্বজনরা নিয়ে আসে এই হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালের মালিক সুমনা আক্তার এনেসথেসিয়া ডাক্তার দ্বারাই সিজারিয়ান অপারেশন করিয়ে ফেলেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং শতভাগ জীবনের ঝুঁকিপূণ। এর আগেও সম্প্রতি ডাক্তার ছাড়া সিজার অপারেশন করানোর কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে এই হাসপাতালে। তারপরও থেমে নেই এমন অবৈধ চিকিৎসা।

ডাঃ নুসরাত জাহান মিথেন বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় ছেঙ্গারচর জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। আমি ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হাসপাতালটিতে মোবাইল কোর্টের সাথে অভিযানে যাই। ওই হাসপাতালে গেলে লাইসেন্স দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও ভুয়া ডাক্তার দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য এবং চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই।

এদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, ছেঙ্গারচর জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সে হাসপাতালটির লাইসেন্স নেই। ভুয়া ডাক্তার দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করার অপরাধে ‘বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০’ অনুযায়ী মালিক কুলসুমা আক্তার সুমনাকে এক বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালটি অনির্দিষ্টকালের জন্য সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী শরিফুল হাসান বলেন, মতলব উত্তর উপজেলায় যেকোন অনিয়ম ছাড় দেওয়া হবে না। অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন সবসময় স্বোচ্ছার রয়েছে।

এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ে স্থানীয়রা স্বাগত জানান। তারা বলেন, মতলবে প্রায় প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারের প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন।

(ইউ/এসপি/জুন ০৮, ২০২১)