চাঁদপুর প্রতিনিধি : চাঁদপুরের ৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মনোহারী সামগ্রী ও খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের আহ্বানকৃত দরপত্র গ্রহণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, অংশগ্রহণকারী অনেক ঠিকাদারের দাখিলকৃত দরপত্রে কাটাছেঁড়া, ঘষা মাজা, ফ্লুইড ব্যবহার, ভ্যাটের ঘর পূরণে অনিয়মের পরেও অর্থ ও প্রভাবের বিনিময়ে অসম্পূর্ণ অনেক দরপত্র গ্রহণ করা হয়েছে।

ফলে উ™ূ¢ত পরিস্থিতি নিয়ে বেশ ক’দিন যাবৎ বিভিন্ন ঠিকাদারের সাথে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বাদানুবাদ এবং মন কষাকষি চলছে। উৎকোচের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে খোদ ঐ কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে অন্তঃকলহ সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে স্টোরকিপার মোঃ রফিকুল ইসলামকে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে।

২০১৪-২০১৫ আর্থিক বছরের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন বাজেটের আওতায় চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক ও জেলার ৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সমূহের জন্য পথ্য সামগ্রী, মনোহারী ও বিবিধ দ্রব্যাদি সরবরাহ এবং লিলেন ধোলাইয়ের নিমিত্তে প্রকৃত ঠিকাদার, সরবরাহকারী, খ্যাতনামা ব্যবসায়ীর নিকট হতে নির্ধারিত সিডিউলে সীলমোহরকৃত খামে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সে মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে শর্তাবলি পূরণ পূর্বক ঠিকাদার ও সরবরাহকারীগণ গত ১৩ আগস্ট দরপত্র জমা দেন। এ ক্ষেত্রে যে যে নিয়ম বা শর্তাবলি জুড়ে দেয়া হয়েছিল ঐ সকল নিয়ম বা শর্তাবলি মোতাবেক ঠিকাদার বা সরবরাহকারীগণ তাদের সিডিউল জমা দিতে পারেনি। আর এই সকল ঠিকাদারের অনেকেই রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট ও প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের অসম্পূর্ণ ত্রুটিপূর্ণ সিডিউল বাতিল না করে এই সকল সিডিউল নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাটা ছেঁড়া করে ঠিক করে তা বহাল রাখার বাণিজ্য করেন টেন্ডার প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি। এ কাজে কিছুটা অনীহা প্রকাশ করলে চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্টোরকিপারকে গতকাল ৩১ আগস্ট শাহরাস্তিতে বদলি করা দেয়া হয়েছে। অবশ্য এই ব্যাপারে বদলিকৃত কর্মকর্তা কিছু বলতে অনীহা প্রকাশ করেন। কী কারণে তাকে বদলি করা হয়েছে তাও তিনি জানেন না বলে জানান।

দরপত্র জমার ক্ষেত্রে ঠিকাদারকে ২০১৩-২০১৪ আর্থিক সনের আয়কর সনদ, ২০১৪-২০১৫ আর্থিক সনের (হাল নাগাদ) ট্রেড লাইসেন্স, হালনাগাদ ব্যাংক সলভেন্সী, সনদের সত্যায়িত অনুলিপি (১ম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক নামের সীল ব্যবহৃত সত্যায়িত) এবং পথ্য ও মনোহারী দ্রব্যাদির মূল্য সংযোজন নিবন্ধীকরণ ভ্যাট (এগার সংখ্যা) সনদের সত্যায়িত কপি এবং স্বীকৃতি পত্র বা ফার্মের নিজস্ব প্যাডে স্বাক্ষর সহ ঠিকাদারকে তার সীলমোহর প্রদান করে তা দরপত্রের সঙ্গে দাখিল করা, দাখিলকৃত দরপত্র পূরণে লেখায় কোনো প্রকার ঘষামাজা, কাটা ছেঁড়া, লেখার উপরে লেখা, ফ্লুইড ব্যবহার বা অসমাপ্ত দরপত্র দাখিল না করতে বলা হলেও অনেকেই মানেন না। অথচ অসম্পূর্ণ ঘষা মাজাকৃত দরপত্র দাখিলকারী ঠিকাদার বা সরবরাহকারীদের কাজ দেয়ার পাঁয়তারা হচ্ছে বলে আবেদনকারী কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন। তাদের কাছ থেকে আরো জানা যায়, টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে সিভিল সার্জনের সাথে টেন্ডার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অনেকের মনোমালিন্য হয়েছে।

এ ব্যাপারে কথা হয় সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রুস্তম আলীর সাথে। জানতে চাওয়া হয় টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ঘুষ বাণিজ্য বা অনিয়ম হয়েছে কিনা। কিন্তু তিনি ঘুষ বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করে বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো অনিয়ম হয়নি। যা হয়েছে সকল নিয়ম মেনেই হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন তার জানা মতে হয়নি এবং ত্রুটিপূর্ণ কোনো টেন্ডারও গ্রহণ করা হয়নি। তবে সিভিল সার্জন যাই বলুক না কেনো, রাজনৈতিক প্রভাব বা অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়েছে কিনা নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই তার সত্যতা জানা যাবে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ে উল্লেখিত দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাথী ট্রেডার্স, মীম এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স মারিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারীগণ সুস্পষ্টভাবে এসব অভিযোগ করেছেন। তারা সুষ্ঠু, সুন্দর এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে দরপত্র গ্রহণ করে সঠিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহ স্থানীয় এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

(এমজে/এটিআর/সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৪)