নওগাঁ প্রতিনিধি : কোন প্রতিবন্ধকতাই হার মানাতে পারেনি সাপাহারের শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবক মিজানুর রহমানকে। উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক্স মেকানিকের কাজ করে ৫ সদস্যর পরিবারের হাল ধরেছেন। নিজে পঙ্গু হলেও নিজে কর্ম করে সমাজের অবহেলীত মানুষের সেবা করতে চান তিনি।

বিগত ১৯৯০সালে নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলা সদরের পার্শ্ববর্তী করলডাঙ্গা গ্রামের হত দরীদ্র মোবারক আলীর ঘর অন্ধকার করে উরুর নিচ থেকে দুই পা পঙ্গু অবস্থায় জন্ম নেয় মিজানুর রহমান । নিম্নবিত্ত পরিবারের বাবা-মা প্রতিবন্ধী সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত হলেও অদম্য মানসিক শক্তির অধিকারী মিজানুর রহমান ছোট থেকেই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে শিখেছে। তার মত অনেক প্রতিবন্ধী জীবনে ভিক্ষা বৃত্তি বেছে নিলেও মিজানুর রহমান ছুটেছে শিক্ষার পিছনে।

স্কুল থেকেই ভাল ফলাফল করতে থাকে মিজানুর রহমান। ২০০৯ সালে এসএসসি ও ২০১২ সালে এইচএসসি পাশ করে বর্তমানে সে সাপাহার সরকারি বিশ্ব বিদ্যালয় ডিগ্রী কলেজে বিবিএ বিভাগে লেখাপড়া করছেন। দিনমজুর বাবা বেশ কিছু দিন ধরে রোজগারে অক্ষম হওয়ায় প্রতিবন্ধী মিজানুর লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে বেছে নেন ইলেক্ট্রনিক্স মেকানিকের কাজ।


প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা না পেলেও বর্তমানে সে নিজ চেষ্টায় সাপাহার সদরে “সাধনা টেলিকম” নামে একটি ইলেক্ট্রনিক্স মেকানিকের দোকান দিয়ে সেখান থেকে রোজগার শুরু করেছে। সেখান থেকে লাভবান হয়ে ৫সদস্য বিশিষ্ট পরিবারটিকে ঠিক চালিয়ে নিচ্ছেন তিনি । এ পেশাটির ওপর নির্ভর করে মিজানুর রহমান নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি এক বোনকে সদরের মহিলা ডিগ্রী কলেজে ও অন্য ছোট বোনকে মাধ্যমিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে রীতিমত লেখাপড়ার খরচও যোগাচ্ছেন। মেকানিক পেশায় অল্প দিনেই নিজেকে সুপরিচিত করে তুলতে পেরেছেন মিজানুর রহমান। শুধু সাধারন মোবাইল ব্যবহারকারীই নয়, সাপাহারের অনেক মোবাইল মেকারকেও মোবাইলের জটিল কোন সমস্যা সমাধানের জন্য ধরনা দিতে হয় প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমানের কাছে।

অদম্য মানসিক ইচ্ছা শক্তির অধিকারী মিজানুর রহমান লেখাপড়া, ইলেক্ট্রনিক্স মেকানিক, সঙ্গীত চর্চা সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছেন। তার ইচ্ছা তিনি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে পারফর্ম করে দেশের সকল প্রতিবন্ধীদেরকে অনুপ্রেরনা যোগাতে। সেই সঙ্গে লেখা পড়া শেষ করে ভালো কোন চাকরি করে সমাজে অবহেলিত মানুষের সেবা করতে চান তিনি।

(বিএম/এএস/সেপ্টম্বর ০৩, ২০১৪)