কাকা-ভাইঝির বিয়েকে অসামাজিক ঘোষণা করায় গ্রামবাসীর উপর সশস্ত্র হামলা, আটক ১
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : চাচা ও ভাতিজার বিয়েকে সামাজিকভাবে বয়কট করায় দুর্নীতিবাজ এক সরকারি কর্মচারীর নেতৃত্বে গ্রামবাসীর উপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজলার ফটিকখালি দেয়াবকসিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এক গ্রামবাসীকে পিটিয়ে জখম করে অপহরেণর সময় এক হামলাকারীকে মোটর সাইকেলসহ আটক করা হয়েছে।
আটককৃতের নাম রবিউল ইসলাম (৩২)। সে আশাশুনি উপজেলার গদাইপুর গ্রামের বরকত মোল্লার ছেলে।
দেয়াবকসিয়া গ্রামের দেবেন মণ্ডলের ছেলে তাপস মণ্ডল জানান, তাদের গ্রামের দীপঙ্কর গাইন তার ভাইঝি পলাশী গাইনকে কয়েক মাস আগে আদালতের মধ্যেমে রেজিষ্ট্রি বিয়ে করে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ হিন্দু সমাজে এটি অসামাজিক উল্লেখ করে দীপঙ্কর গাইনকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়। এ কারণে দীপঙ্কর ও পলাশী দীর্ঘদিন গ্রামে না আসলেও কয়েকদিন আগে তারা বাড়িতে আসে। এ নিয়ে শুক্রবার সকালে তাদের পাড়ার কয়েকজন মিলে আলোচনা করে সন্ধ্যায় বসাবসির সিদ্ধান্ত হয়। বসাবসির ব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসের করণিক তাদের গ্রামের প্রদীপ মণ্ডলকে অবহিত করা হয়।
তাপস মণ্ডল আরো জানায়, প্রদীপ মণ্ডল গ্রামবাসিকে জব্দ করতে দীপঙ্করের পক্ষ নিয়ে ১২টি মোটর সাইকেলে কমপক্ষে ৩০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাদের পাড়ায় আসে। এ সময় সন্ত্রাসীরা লোহার রড ও লাঠি দিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। দীঘির পাড়ে বসে থাকা তার ভাই বিধান মণ্ডলকে প্রদীপের নৃতৃত্বে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়। বিধানকে মোটর সাইকেলে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় নারী ও পুরুষ সম্মিলিতভাবে বিধানকে ছাড়িয়ে নেয়। এ সময় হামসলাকারি গদাইপুর গ্রামের রবিউল মোল্লাকে লোহার রড ও মোটর সাইকেলসহ আটক করা হয়। বিধানকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। খবর দেওয়া হয় পুলিশে।
স্থানীয়রা আরো জানান, প্রদীপ মণ্ডল সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে প্রধান করণিক হিসেবে কাজ করার সুবাদে চাকুরি দেওয়ার নামে, বদলী করিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার নামে বিভিন্ন শিক্ষক, শিক্ষিকা ও বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছেন। সাতক্ষীরা শহরের রথখোলা মাঠে তিনি বিলাসবহুল বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন।
এলাকায় ও শহরে তিনি কয়েক জায়গায় স্বনামে বেনামে জমি কিনেছেন। সর্বোপরি ক্ষমতার দাপট দেখাতে ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ম্যানেজ করে নিজের স্ত্রী সুরোধনিকে অবৈধ উপায়ে আংশিক কমিটির অনুমোদন প্রাপ্তদের একাংশকে ব্যবহার করে সাধারণ সম্পাদক বানানোর চেষ্টা করেছেন প্রদীপ। এজন্য প্রদীপ গদাইপুর মোল্লা পাড়ার খুলনা নিবাসী ঠিকাদার ও সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুসকে ম্যানেজ করেছেন। সে কারণে শুক্রবার নিজ গ্রামবাসির উপর হামলা চালাতে রুহুল কুদ্দুস ও অহিদুল মোল্লার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের ভাড়া করেছে প্রদীপ মণ্ডল।
আটককৃত রবিউল মোল্লা জানান, প্রদীপ মণ্ডল মাথাপিছু ৫০০ টাকা দিয়ে তাদেরকে দেয়াবকসিয়া গ্রামে একটি শালিসে অংশ নেওয়ার জন্য নিয়ে আসেন। অহিদুল মোল্লার কথায় তারা প্রদীপের কাজে এসেছেন।
এ ব্যাপারে শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রদীপ মণ্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোনে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বলেন, আপনি কোথায় আছেন? এখুনি আপনার সঙ্গে দেখা করছি।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কবীর সাংবাদিকদের জানান, খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(আরকে/এসপি/জুন ২৫, ২০২১)