রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাব খা ও গতিয়াসাম মৌজার প্রায় অর্ধশতাধিক ঘড়বাড়ী ও গাছপালা তিস্তা নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে। সড়কের সংযোগ সেতু বিচ্ছিন্ন হয়ে তিস্তার মাঝ নদীর উপরে দাঁড়িয়ে আছে। ভিটেমাটি হারা অসহায় মানুষজন আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের জায়গা জমিতে। সহায় সম্বল হায়িয়ে কোন রকমের মাথা গোজার ঠাঁই নিয়েছেন অন্যের জায়গায় আবার কেউ কেউ বাঁধের রাস্তায়। 

তিস্তা নদীর হুমকির মুখে রয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট বড় দরগাহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও হাফিজিয়া মাদরাসাসহ বড় দরগাহ মাজার শরীফ। এদিকে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি মৌজার প্রায় ৩০টি বাড়ি তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী মানুষ। রামহরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ হুমকিতে আছে মসজিদ ও ওই গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার। পার্শ্ববর্তী চতুরা কালিরহাট বাজারও রয়েছে হুমকিতে। বাজারটি গত বছরের তিস্তার তীব্র ভাঙ্গন ঠেকাতে ফেলানো হয় কয়েক হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ। এবারের ভাঙ্গন গত কয়েক বছরের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারন করছে। এখনেই পদক্ষেপ নেওয়া না হলে রক্ষা করা যাবে না বাজারটি সহ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদসহ পুরো গ্রাম।

এছাড়া বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ মৌজার বিদ্যানন্দ বাজার, বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দির হুমকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়সারা দায়িত্ব পালনে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষজন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ভিটে হারা খিতাঁব খার ঈমান আলী (৬০) বলেন, ‘বাহে দেখতে দেখতে মোর বাড়িটা ভাঙ্গি গেলো, দুইদিন আগাতো এটে কোনা মোর বাড়ি আঁচিলো। এখন মাইসের কাছত একনা জায়গা নিয়া কোনো মতে একনা ঘর তুলি আছোং।’

খিতাব খাঁর মনোয়ারা বেগম (৫৫) বলেন, চোখের পলোকোত বাড়ি ভাঙ্গি গেলো, এমন ভাঙ্গন আগে মুই দ্যাখোং নাই। জমজমি বাড়ি ভিটা সোউগে নদীত গেলো, এখন ছাওয়া পোওয়া নিয়া ক্যামন করি চলমো আল্লাহ্ ছারা কবার কোন বুদ্ধি নাই। স্থানীয় মামুনুল ইসলাম মামুন বলেন, যেভাবে এবার তিস্তা ভয়াবহ রুপ ধারণ করছে দ্রুত ভাঙ্গন ঠেকানোর ব্যবস্থা করা না হলে পুরো গ্রাম নদী গর্ভে চলে যাবে। স্কুল, মাদ্রাসা, মাজার শরিফ কিছু রক্ষা করা যাবে না।

রামহরি গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল বাতেন বলেন, প্রতিবছর বর্ষা আসলে ভাঙ্গন দেখা দেয়। একটু একটু করে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এই ওয়ার্ডে তিন ভাগেই তিস্তা নদীর গর্ভে চলে গেছে। এখন ১’শ ৫০টি পরিবার রয়েছে। বিদ্যানন্দ মৌজার তিস্তা নদীর তীরবর্তী কানন সরকার (২৮) আক্ষেপ করে বলেন, ভাঙ্গন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মকর্তাদের জানিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। আমরা নদী ভাঙ্গনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে শনিবার (২৬জুন) পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, গতিয়াসাম এলাকায় তিস্তা নদীতে তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলানো হচ্ছে।

(পিএস/এসপি/জুন ২৬, ২০২১)