মতিউর রহমান মুন্না, আরব আমিরাত থেকে : আরব দেশ নিয়ে ভাবলে মনে হয় শুধু মরুভূমির কথা। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবী ও বাণিজ্যিক শহর দুবাই গেলে বুঝার উপায় নেই এটি কোনো আরব দেশ। বিলাসবহুল জীবনযাপন, চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি, আকাশচুম্বি অট্রালিকা, বিলাসবহুল হোটেল, কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জসহ অনেক কিছু রয়েছে। এখানে উঁচু উঁচু দালানের প্রতিযোগিতা দিন দিন বেড়েই চলছে। যতই দেখবেন মনে হবে একটা থেকে আরেকটা উঁচু ও সুন্দর। দেখার স্বাদ আর মিটবেনা। 

তবে কালের বিবর্তনে হাজারো পরিবর্তন আসলেও মরুর বুকে মরিচিকার সেই রূপ এখনো স্বাভাবিক রয়েছে।

শহরের বাহিরে গেলেই দেখা মিলে ভিন্নতা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সকল আমিরাতেই রয়েছে নানা আকর্ষণীয় স্থাপনা বা পর্যটন কেন্দ্র। শহরের ইট পাথরের যান্ত্রিক জীবন থেকে কোলাহল মুক্ত পরিবেশে যেতে কার না ভালো লাগে। তাইতো আমরা ঘুরে বেড়াই শহর থেকে দূরে আরবের বিভিন্ন পথে প্রান্তরে। এবার গন্তব্য স্থান নির্ধারন করলাম পাহাড় পাথরের রাজ্য ফুজিরাহ।

দুবাইয়ের সীমানা অতিক্রমের পরই দেখা যায় ডানে-বাঁয়ে বড় বড় পাথরের পাহাড়। কিছুক্ষন পরপরই দেখা যায় ভ্রাম্যমান ফলের দোকান। ব্যবসায়ীরা মাইক্রোবাসের পেছনের অংশে ফল দিয়ে সাজিয়ে দাড়িয়ে থাকেন সড়কের পাশে খালি জায়গায়। সড়ক দিয়ে যাতায়েতকারী অনেকেই তাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে যান ফল।

গাড়ি ছুটে চলছে দ্রুত গতিতে। যতই দেখি শুধু পাহাড় আর পাহাড়। এই এলাকাটি যেন পাথর পাহাড়ের রাজ্য। কিছুক্ষণ যাওয়ার দেখা যায় পাথর পাহাড়ের বুক কেটে তৈরী করা হয়েছে টানেল। অনেক লম্বা টানেলের ভিতর দিয়ে গাড়ী চলাচল করা অনেক ভালো লাগলো। পর পর ৬টি টালেন পেরিয়ে গেলাম। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে গিয়ে পৌছালাম খোর ফাক্কান। এটি শারজাহ প্রদেশে অবস্থিত এবং ফুজিরাহ প্রদেশ এর এর সিমান্ত। সমুদ্র উপকূলীয় শহর খোর ফাক্কানের পরিবেশটাই যেন অন্য রকম। প্রথমে গেলাম আল রাবি টাওয়ারে।

পাহাড়ি পথ বেয়ে অনেক উঁচু রাবি টাওয়ারের চূড়ায় উঠে কিছু চিত্র ধারণ করে চললাম একটা জলপ্রপাতের সন্ধানে। সাগরের পাশে সড়কে চলতে চলতে খুবই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। পোঁছালাম জলপ্রপাতের কাছে। সড়কের এক পাশে বিশাল সাগর ওপর পাশে পাহাড়ের বুকে তৈরী করা হয়েছে কৃত্রিম জলপ্রপাত। পাহাড়ের চূড়া থেকে নেমে আসছে সাদা জলের ধারা। জলের বিচিত্র শব্দ যেন সবাইকেই কাছে টানে। বিস্ময়কর এক অনুভূতির শিহরণ জাগে জলপ্রপাতের সামনে দাঁড়ালে। শরীর ও মনের ক্লান্তি নিমিষেই দূর করে দেয় জলপ্রপাতের সৌন্দর্য।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ মিটার উচ্চতার এই কৃত্রিম জলপ্রপাতটি দেখতে পর্যটকদের বেশ ভিড় ছিল। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পর্যটকরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য না করে তাই সেখানে পুলিশের উপস্থিতিও ছিল। পুলিশ এক সাথে ৮/৯ জন করে জলপ্রপাতটি সামনে গিয়ে ছবি তোলার সুযোগ দিয়ে বাকিদের পাশে অপেক্ষা করতে বলেন। তাদের ছবি তোলা শেষ হলে অন্যদের যেতে দেন। জলপ্রপাত ও সাগরের পাড়ে প্রায় ঘন্টাকানেক সময় কাটানোর পর এলাকার ভাইয়ের আমন্ত্রনে গেলাম ফুজিরাহ। সেখানে নৈশভোজ শেষে ফের ফিরে এলাম দুবাই শহরে।

(এম/এসপি/জুলাই ০১, ২০২১)