ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি  :  করোনা ভাইরাসের প্রাণঘাতী বিস্তার ঠেকাতে দেশব্যাপী ৭ দিনের কঠোর লকডাউনের মধ্যেও ঈশ্বরদী শহরের অলিগলি ও পাড়া-মহল্লায় চলছে ব্যাপক আড্ডাবাজি। মহল্লার চায়ের দোকানের আড্ডায় যুবক থেকে বৃদ্ধ সবাইকে যোগ দিতে দেখা যাচ্ছে।

এসব মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে সরকার নির্দেশিত সচেতনতার লেশমাত্র নেই। শহরের প্রধান রাস্তাগুলো অনেকটা জনশূন্য দেখা গেলেও পাড়া-মহল্লার চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। চায়ের দোকান ছাড়াও জটলা পাকিয়ে আড্ডা চলে গলির মোড়ে, বাড়ির ছাদে-সিঁড়িতে, এখানে-ওখানে। পুলিশের টহল গাড়ি দেখলেই সবাই আড়ালে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার আগের অবস্থা। করোনা মহামারির এই দুঃসময়ে সামাজিক দূরত্ব না মানায় আড্ডাবাজ এসব মানুষ নিজেরা যেমন ঝুঁকিতে পড়ছেন, তেমনি ঝুঁকিতে ফেলছেন পরিবারসহ আশাপাশের অন্যদেরও।

১ ‍জুলাই থেকে গোটা দেশে চলছে কঠোর লকডাউন চলছে। সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিশেষজ্ঞরা দেশবাসীর প্রতি বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন সবাই যেন ঘরে অবস্থান করেন। অতি জরুরি কাজ, যেমন পেশাগত বা চাকরির প্রয়োজনে এবং ওষুধ ও খাদ্যসামগ্রীর মতো জরুরি পণ্য কিনতে স্বল্প সময়ের জন্য বাইরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা দূরত্ব বজায় রাখাকে গোটা বিশ্ব সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

কিন্তু ঈশ্বরদীর অনেকেই সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে অযথাই পাড়া-মহল্লায় জটলা করছেন। কোনো কারণ ছাড়াই কেউ কেউ ঘরের বাইরে যাচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণদের কাউকে কাউকে ৪-৫ জন করে গ্রুপ আড্ডা দিতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন বয়সের মানুষকেও দেখা যাচ্ছে দোকানের সামনে, গলির মুখে, বিভিন্ন ভবনের সিঁড়িতে কিংবা গলির রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে দল বেঁধে গল্প করছেন। এসময় অনেকের মুখে মাস্কও দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে একজন আরেকজনের সঙ্গে যে দূরত্ব বজায় রাখা উচিত বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও বিশেষজ্ঞরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেটিরও তোয়াক্কা করছেন না এসব আড্ডাবাজ মানুষগুলো। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে একমাত্র সচেতনতাই মূল চিকিৎসা।

ঈশ্বরদী শহরের কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মুদি দোকান, ওষুধের দোকানের সামনে বেশ কয়েকজন দল বেঁধে গল্প করছেন। কাউকে কাউকে দেখা যায় গলিপথের মোড়ে মোড়ে চার-পাঁচ জন করে খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বা বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কেউ কেউ উদ্দেশ্য ছাড়াই রাস্তায় হাঁটছেন, মোবাইলে কথা বলছেন।

ঈশ্বরদী শহরের মধ্য অরণকোলা এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, এলাকার গলিতে গলিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানান বয়সের লোকজনকে সেখানে গ্রুপ বেঁধে আড্ডা দিতে দেখেন। এতে জরুরি পণ্য কেনার জন্য যারা দোকানে যাচ্ছেন কিংবা রাস্তায় বের হচ্ছেন, তারাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন।

কারণ সেখানে প্রয়োজনীয় সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। এছাড়া অনেকেই যখন-তখন যত্রতত্র উন্মুক্ত স্থানে হাঁচি-কাশি দিচ্ছেন, থুথু ফেলছেন। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচারও মানা হচ্ছে না। তাই হাঁচির জলকণা গিয়ে আরেকজনের শরীরে লাগছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেখা উচিত বলে মত দেন তিনি। বিনা কারণে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করা এবং পাড়া-মহল্লায় দল বেঁধে যারা আড্ডা দিচ্ছেন তাদের কেউ কেউ বলছেন, এভাবে কতক্ষণ ঘরে থাকা যায়!

ঈশ্বরদীতে করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। গত শুক্রবার ঈশ্বরদীতে ১৮৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। তাই পাড়া মহল্লার আড্ডাবাজি বন্ধে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন সচেতন এলাকাবাসী।

পাশাপাশি অনেকেই বলেছেন, প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে সবাই সচেতন না হলে এটা ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ছেলেমেয়েরা যাতে বিনা কারণে বাইরে ঘোরাফেরা করতে না পারে, এ ব্যাপারে অভিভাবকদেরও সচেতন হওয়া জরুরি।

(এসকেকে/এএস/জুলাই ০৩, ২০২১)