মাগুরা প্রতিনিধি : প্রায় ৫ বছর পূর্বে শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু করার প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করা হলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এখনো পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়নি এ কার্যক্রম। ফলে উপজেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ সরকারি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

উপজেলার প্রায় ২ লক্ষ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র কেন্দ্র এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০০৪ সালে এটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যার উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। ২০০৯ সালে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের দোতলা ভবনসহ কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য তিনটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত একটি আধুনিক অস্ত্রপচার কক্ষসহ বিভিন্ন বিভাগের জন্য সরবরাহ করা হয় যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। রোগীদের বিছানাপত্রসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র।

২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে হাসপাতালের কার্যক্রম চালু করার অনুমোদনও দেয়া হয়। সকল ক্ষেত্রে ইউজার ফি আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালু না হওয়ায় হাসপাতালের অত্যাধুনিক দামি চিকিৎসা সরঞ্জাম অব্যবহৃত থাকায় বিনষ্ট হতে চলেছে। অন্যদিকে ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে কার্যক্রম চালু রয়েছে তাতে লোকবলের অভাবে সমস্যার অন্ত নেই। সমগ্র উপজেলায় চিকিৎসকেনর পদ রয়েছে ১৫টি। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৯টি। এখানে কর্মরত আছেন উজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ডেন্টাল সার্জন, মেডিকেল অফিসার, গাইনী বিশেষঞ্জ, মেডিসিন বিশেষঞ্জের বিপরিতে শিশু বিশেষঞ্জ, সার্জারি বিশেষঞ্জের বিপরিতে অর্থপেডিক বিশেষঞ্জ ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ডেপুটেশনে আনা ১ জন চিকিৎসকসহ ৮ জন। অন্যদিকে অফিস সহকারি,ক্যাশিয়ার, স্বাস্থ্য সহকারি, ওয়ার্ডবয়, আয়া, সুইপার, নৈশপ্রহরী, কুক মশালচী, এমএলএসএস ও মালি পদে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মচারির সংখ্যা অর্ধেক থাকায় চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

প্রতিদিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে গড়ে দেড় শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। এ রোগীর চাপ সামলাতে প্রতিদিনই এক থেকে দু জন চিকিৎসককে দেখা যায়। অন্ত:বিভাগে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগী ভর্তি থাকে। অধিকাংশ সময় আবাসিক মেডিকেল অফিসার ছাড়া কেউ কর্মস্থলে থাকে না। বিশেষঞ্জ চিকিৎসকেরা সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এখানে রোগী দেখেন। ডেন্টাল সার্জন ও টেকনিশিয়ানের এখানের কাজে তাদের মন নেই। দাঁতের রোগী পেলেই কোন অস্ত্রপাতি নেই অজুহাতে যশোরের একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে যেতে বলেন। অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটারে জমেছে ধুলার আস্তর। অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় ৩ বছর যাবৎ সব ধরনের অপারেশন বন্ধ রয়েছে। সার্জারি চিকিৎসকের অভাবে যে কোন ধরনের সার্জারির জন্য জেলা সদরে রোগীদের দৌড়াতে হয়। গাইনী বিশেষঞ্জ চিকিৎসক থাকলেও অঞ্জান ডাক্তারের অভাবে প্রসুতিদের সিজারিয়ান বন্ধ রয়েছে। এতে দরিদ্র প্রসুতিদের দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ৩ বছর ধওে এ্যাম্বুলেন্সটি বিকল হয়ে থাকায় প্রসুতি রোগীদের নসিমন-করিমনে করে সদর হাসপাতালে নিতে হয়। অনেক সময় দেখা গেছে নসিমন-করিমনের ঝাঁকিতে পথের মাঝেই সন্তান ভ’মিষ্ঠ হতে। ৪ বছর যাবৎ ডেন্টাল এক্সরে মেশিন বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে ধুলার আস্তরন, মাকড়সার জালে মেশিনটি অকেজো হতে চলেছে। অথচ কর্তৃপক্ষের সে দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।

ডা. মুন্সী মো. ছাদুল্লাহ জানান, এ ব্যাপারে আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিক বার লিখিত আবেদন করেও কোন ফল পাইনি।

(ডিএইচ/এটিআর/সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৪)