আহসানুল করিম : সুন্দরবনে ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের অভাবে লক্ষাধিক জেলে-বনজীবী ও পর্যটকরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে জলোচ্ছাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে জেলে ও বনজীবীদের একমাত্র আশ্রয়স্থল ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। ৯০ দশকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কারিতাসের সহায়তায় সুন্দরবনে ৫টি সাইক্লোন সেন্টার নির্মিত হয়।

বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে একটি আশ্রয় কেন্দ্র ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় বর্ষার মৌসুমে ও ঘূর্নিঝড়ের আশংকায় জেলে ও বনজীবীরা উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে পড়তে হয়।

বনবিভাগ ও জেলেদের সূত্রে জানাগেছে, বছরের প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস বনজ সম্পদ, মৎস্য আহরণ ও শুটকি প্রক্রিয়াজাত করণ কাজে নিয়োজিত থাকে অধিকাংশ জেলেরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সুন্দরবন ও সমুদ্রে মৎস আহরণের কাজে আসা হাজার হাজার জেলেদের প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৎস্য আহরণ কাজে নিয়োজিত হয়। সুপার সাইক্লোন সিডর, আইলা, মহাসেনের মত ঘূর্নিঝড় ও জলোচ্ছাসের মধ্যে তাদের জীবন জীবিকায় লড়তে হয়। কিন্তু দুর্যোগকালীন মুর্হুতে জেলেদের গভীর সমুদ্র কিংবা তৎসংলগ্ন এলাকায় মাথা গোজার ঠাই থাকে না।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতায় একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ৫টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান করলেও সিডর পরবর্তী গত ৭ বছরেও কোনো আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ বা সংষ্কার না করায় দু/একটি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।

পূর্ব সুন্দরবনের দুবলারচর, শেলার চর, মাঝের চর, মেহেরআলীর চর ও আলোরকোলে ৫টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান করা হয় নব্বই দশকে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে দুর্যোগকালীন সময়ে প্রায় ৩ হাজার লোকের ঠাঁই হলেও বাকী জেলে ও বাওয়ালীদের আশ্রয় নিতে হয় ট্রলার, নৌকা ও বনের বিভিন্ন গাছে।

বন বিভাগ সূত্রে আরো জানাযায়, প্রতি বছর ইলিশ আহরণ ও শুটকি মৌশুমে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর এলাকায় লক্ষাধিক জেলে সুন্দরবনে জীবিকা আন্বেষনে নিয়োজিত হয়। প্রতি মৌশুমে সরকার জেলেদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করলেও দুর্গম ওই সকল চরাঞ্চলে নেই জেলে-বনজীবীদের মাথা গোজার ঠাই আশ্রয় কেন্দ্র।

সুন্দরবন সংলগ্ন শরনখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের মৎস্য ব্যবসায়ী আওয়াল জোমার্দ্দার জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জেলেরা নিরুপায় হয়ে বনের ভিতর বিভিন্ন গাছে আশ্রয় নিয়ে থাকে। জেলেদের জন্য সাগর পাড়ের জেলে পল্লীগুলোতে কমপক্ষে ৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা প্রয়োজন বলে তিনি দাবী করেন।

শরণখোলা মৎসজীবি সমিতির সভাপতি মো, আবুল হোসেন জানান, জেলেদের কাছ থেকে সরকার প্রতি মৌশুমে মোটা অংকের রাজস্ব আদায় করলেও তাদের নিরাপত্তার জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা নেই সমুদ্র ও চরাঞ্চলে। এমনকি সাগরে জেলেদের আগাম বিপদ সংকেত জানানোর তেমন কোনো ব্যবস্থাও নেই।

পূর্ব সুন্দবন বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা আমীর হোসেন চৌধুরী জানান, বেসরকারি সংস্থা কারিতাসের উদ্যোগে যে আশ্রায় কেন্দ্র নির্মান করা হয়েছিল সেগুলো সে অবস্থাতেই রয়েছে। তবে নতুন আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান ও পুরাতন গুলো সংষ্কার করা হলে জেলে ও বনজীবীদের দুর্যোগকালীন সময়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হবে না।

(একে/এটিআর/সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৪)