নূরুল আমিন খোকন, ফেনী : দুইদিন আইসিউর জন্য অপেক্ষা করতে করতে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে শ্বাসকষ্টে মারা যান মোঃ মোস্তফা, বুধবার (৭ জুলাই) শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা প্রয়োজন বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু দুইদিনেও ফেনীর কোন হাসপাতালে আইসিইউ'র সিট পাওয়া যায়নি।

স্বজনদের কাছ থেকে জানা যায়, ফেনী জেনারেল হাসপাতালের ১০ শয্যার আইসিইউ রোগীতে পরিপূর্ণ ছিল। এতে কোভিড সাধারণ ওয়ার্ডে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয় মোঃ মোস্তফাকে (৬৭), সেখানেই বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বেলা আড়াইটার দিকে ছটফট করতে করতে মারা যান তিনি।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালে এভাবেই আইসিইউ শয্যার জন্য হাহাকার চলছে প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালে আছে তিনটি আইসিইউ শয্যা, সেখানেও খালি নেই কোন বেড ! আইসিইউ'র জন্য করোনায় আক্রান্তদের স্বজনেরা বারবার ধরনা দিচ্ছেন চিকিৎসকদের কাছে, কিন্তু শয্যাসংকটে তারা নিরুপায়, ফলে মৃত্যু বাড়ছে।
গতকাল শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুরে তিন ঘণ্টায় জেনারেল হাসপাতালে মারা যান তিনজন।

জ্বরের পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের আফজালুর রহমানকে (৭৫) গতকাল শুক্রবার প্রথমে ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখানে করোনা ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায় দুপুরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেলা আড়াইটায় তিনি মারা যান। তার আগে দুপুর ১২টায় জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মারা যান হালিমা খাতুন (৭০) নামের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের এক রোগী।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হোসেন ভূঞা জানান, ফেনীতে আইসিইউ'র চাহিদা রয়েছে কিন্তু খালি না হলে নতুন কাউকে ভর্তি করা যাচ্ছে না। করোনা ওয়ার্ডে পজিটিভ রোগী আছেন ৩৪ জন। উপসর্গ নিয়ে আছেন আরও ৬৩ জন।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হলেও জনবল রয়েছে ১০০ শয্যার। সব মিলিয়ে হাসপাতালে ৩৮০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে রোগী বেশি। ৩০ শয্যার ওয়ার্ডটির দুই পাশে পজিটিভ এবং উপসর্গ থাকা রোগীদের রাখা হয়েছে।

ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মোস্তফা (৬৭) জ্বর, কাশি ও গলাব্যথা নিয়ে ৪ জুলাই বিকেলে ফেনী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। গত মঙ্গলবার (৬ জুলাই) তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে গ্রামের রোগী বেশি আসছেন। দেরি করে চিকিৎসা নিতে আসে বলে অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন হচ্ছে। আইসিইউ, কোভিড ওয়ার্ডের পজিটিভ এবং উপসর্গের মোট ৭৯ জনকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। ফলে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হয়।
জ্বর, কাশি বা গলাব্যথা দেখা দিলে দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

(এনকে/এসপি/জুলাই ০৯, ২০২১)