রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার উফাপুর গ্রামে মুরগী বিক্রির ২০ হাজার টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে পুত্রকে পিটিয়ে জখম ও পিতাকে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গত চার দিনেও কোন আাসামিকে গ্রেপ্তার করেত পারেনি পুলিশ। উপরন্তু মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামীরা বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে।

সরেজমিনে শনিবার সকালে কলারোয়া উপজেলার উফাপুর শেখ পাড়ায় গেলে শেখ রিপন জানান, তার ছোট ভাই পলাশ বর্তমানে মালয়েশিয়ায় থাকে। তিনি সম্প্রতি বাড়িতে ব্রয়লার মুরগী পালন করেন। একই সাথে অন্য ফার্ম থেকে মুরগী কিনে বিভিন্ন বাজারে ও ব্যবসায়ির কাছে পাইকারী বিক্রি করে থাকেন। গত পহেলা জুলাই তিনি একই গ্রামের আব্দুল মাজেদ ঢালীর ছেলে উজ্জ্বল ঢালীর কাছে ২০ হাজার টাকা মূল্যের ব্রয়লার মুরগী বিক্রি করেন উজ্জ্বল একদিন পর টাকা দেবে বলে তার কাছ থেকে বাকীতে মুরগী নেয়।

৬ জুলাই টাকা না দেওয়ায় পরদিন রাত সাড়ে সাতটার দিকে তিনি বসন্তপুর তালতলা মোড়ে নিজ দোকানের সামনে উজ্জলকে পেয়ে টাকা চান। কিছুক্ষন পর উজ্জ্বল তার ভাই আফজাল, আজগার আলী ছাড়াও ইমান আলী বিশ্বাস ও হৃদয় মোড়ল তার দোকানের ভিতরে তাকে টাকা দেবে না বলে হেঁকে দেয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করার একপর্যায়ে উজ্জ্বল ওতার দু’ ভাইসহ ইমান আলী তাকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারে। কিছুক্ষণ পর তার বাবা শেখ রেজাউল ইসলাম দোকানে এসে ঘটনা জেনে প্রতিবাদ করায় তাকেও কিল, ঘুষি, লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেওয়া হয়। উজ্জ্বল বাবাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করে।

এ ঘটনা চলাকালিন সময় উজ্জ্বলের মোবাইল ফোন পেয়ে অজেদ ঢালী, রণি ঢালী, রুহুল আমিন মোড়ল ঘটনাস্থলে এসে তাকে ও তার বাবাকে যথেচ্ছভাবে বুকে, পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে জখম করে। গলা চেপে বাবাকে শ্বাসরোধ করে হত্রার চেষ্টা করে। পরে বাবা মারা গেছে এমনটি জানার পরও হৃদয়. ইমান, রুহুল আমিন ও হায়দার বাবার নিথর দেহের উপর লাথি মারে। এ সময় স্থানীয় চায়ের দোকানদার নায়েব আলী ও বেল্লাল হোসেন তাদেরকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাদেরকেও ধাওয়া করে বিতাড়িত করে হামলাকারিরা।

খবর মেয়ে মামা কামাল হোসেন এসে স্থানীয় জননী ফার্মেসীর মালিক আউ বক্করের সহযোগিতায় এম্বুলেযোগে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে। পরদিন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে তার বাবার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে উজ্জ্বলসহ নয়জনকে আসামী করে ৮ জুলাই থানায় হত্যা মামলা (১০নং) দায়ের করেন।

রিপন অভিযোগ করে বলেন, আসামী উজ্জ্বল ও হায়দার আলী ২০১৩ সালে উফাপুর গ্রামের মুনসুর আলীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ও লুটপাটের মামলার এজাহারভুক্ত আসামী। অন্য আসামীরাও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। গত চার দিনেও কোন আসামী গ্রেপ্তার না হওয়ায় তাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে প্রলোভন দেখানো ছাড়াও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

নিহত রেজাউল ইসলামের স্ত্রী সালেহা বেগম জানান, তার স্বামী দিন মজুর ছিলেন। এ হত্যার বিচার না হলে তারা গ্রামে বাস করতে পারবেন না। তবে এলাকার ছোট থেকে বড় মাপের জনপ্রতিনিধিরা আসামীদের শেল্টার দিচ্ছে। ফলে পুলিশ আসামীদের ধরতে ইতস্ততঃ করছে।

যুগিখালি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ আবুল হোসেন বলেন অবিলম্বে আসামীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

এ ব্যাপারে আসামী উজ্জ্বল ঢালীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার এক আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার সত্যকা স্বীকার করে বলেন, ২০ হাজার টাকা নয়, আড়াই হাজার টাকার জন্য এ ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে গেছে।

মামলার তদন্তককারি কর্মকর্তা কলারোয়া থানার উপপরিদর্শক সোহরাব হোসেন বলেন, আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যহত আছে।

কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর খায়রুল কবীর জানান, কোন রাজনৈতিক নেতা বা জনপ্রতিনিধির চাপে আসামী ধরা হচ্ছে না এমন কথা সত্য নয়। আসামীরা পলাতক থাকায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা করে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। দু’ এক দিনের মধ্যেই এলাকাবাসী বিষয়টি বুঝতে পারবেন।

(আরকে/এসপি/জুলাই ১০, ২০২১)