ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়াহেদ খানের স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে ৪ লাখ টাকা উত্তোলনের চেষ্টায় পৌর কর্মচারী দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন, পৌরসভার কোষাধ্যক্ষ রেখা বেগম ও তাঁর স্বামী পৌরসভার ইলেকট্রিশিয়ান সিরাজুল ইসলাম। এ সময় রেখা বেগমের ভাই মো. কামাল হোসেন টাকা নিয়ে পৌরসভায় এসে পুলিশকে ঘুষ দিতে চাইলে ১ লাখ ২২ হাজার টাকাসহ তাকেও আটক করা হয়। সোমবার রাতে নলছিটি পৌরসভায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পৌর মেয়র আবদুল ওয়াহেদ খান বাদী হয়ে পৌরসভার পক্ষ থেকে সোমবার রাতে নলছিটি থানায় মামলা দায়ের করেন। 

পুলিশ ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানায়, মেয়র আবদুল ওয়াহেদ খানের স্বাক্ষর জাল করে মেসার্স সুগন্ধা এন্টারপ্রাইজের নামে ৪ লাখ টাকার একটি চেক নিয়ে ইলেকট্রিশিয়ান সিরাজুল ইসলাম ২৬ জুলাই নলছিটি সোনালি ব্যাংক শাখায় উপস্থাপন করেন। স্বাক্ষর সঠিক নয়, এমন সন্দেহে চেকটি ফেরত দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরপর পৌরসভার কোষাধ্যক্ষ রেখা বেগম আরেকটি চেক লিখে টাকা উত্তোলনের অপচেষ্টা চালান।

এ সময় নলছিটি সোনালি ব্যাংকের ব্যাবস্থাপক পৌর মেয়রের কাছে মুঠোফোনে বিষয়টি জানতে চান। মেয়র আদৌ চেক সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়ে তিনি কৌশলে পৌরসভার কোষাধ্যক্ষ রেখা বেগম ও তাঁর স্বামী ইলেকট্রিশিয়ান সিরাজুল ইসলামের কাছথেকে জালিয়াতির চেকটি ও চেক বই উদ্ধার করেন। পরে তাদেরকে পৌরসভার একটি কক্ষে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন মেয়র।

এদিকে পুলিশকে ঘুষ দিয়ে ছাড়া পাবার আশায় কোষাধ্যক্ষ রেখা বেগম তার ভাই মো. কামাল হোসেনকে টাকা নিয়ে পৌরসভায় আসতে বলেন। কামাল এক লাখ ২২ হাজার টাকা নিয়ে পৌরসভায় এসে পুলিশকে ঘুষ দিতে চাইলে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকেও আটক করে পুলিশ। এসময় ওই এক লাখ ২২ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। আটককৃত তিন জনকে রাতেই পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। তবে পরে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান কামাল হোসেন।

এদিকে চেকটি পর্যবেক্ষন করে দেখা যায়, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সচিবের স্বাক্ষর লাল কালি দিয়ে চিহ্নিত করেছেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যাংকে সংরক্ষিত সচিবের যে নমুনা স্বাক্ষরটি রয়েছে, সেই স্বাক্ষরের সাথে এই চেকের স্বাক্ষরের সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ধারণা, টাকা আত্মসাতের সাথে সচিবও জড়িত রয়েছেন। তবে মামলায় কেন সচিবকে আসামি করা হয়নি, এই নিয়ে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পৌরসভার সচিব এ এইচ এম রাশেদ ইকবাল বলেন, আমি কোন চেকে সই কিরিনি। এটাও জাল করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আবদুল ওয়াহেদ খান বলেন, ‘পৌরসভায় কোন ধরণের অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। যেই অপরাধ-দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকুকনা কেন, তাকেই আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’

নলছিটি থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মাহমুদ হাসান প্রিন্স বলেন, মঙ্গলবার সকালে আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(এস/এসপি/জুলাই ২৭, ২০২১)