বগুড়া প্রতিনিধি : বগুড়ায় মামলার ভয় দেখিয়ে ব্যবসায়ীর কাছে ৯ লাখ টাকা চাঁদা নেয়ার অভিযোগে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) দুই কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। এদের মধ্যে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার সাইবার ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক এমরান মাহমুদ তুহিন-কে বদলি এবং একই ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শওকত আলম-কে সাময়িক বরখাস্তসহ বদলী করা হয়েছে। বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ মে ডিবির পুলিশ পরিদর্শক এমরান মাহমুদ তুহিন এবং উপ-পরিদর্শক শওকত আলম বগুড়া সদরের শিকারপুর গ্রামে মাস্টার বিড়ি ফ্যাক্টরিতে যান। ফ্যাক্টরীর গোডাউনে বিপুল পরিমাণ জাল ব্যান্ডরোল মজুদ আছে জানিয়ে মাস্টার বিড়ির স্বত্ত্বাধিকারী হেলালকে ডেকে আনেন। গোডাউন খোলার পর প্রাপ্ত ব্যান্ডরোল বৈধ বলে দাবি করেন প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী হেলাল। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা ব্যান্ডরোলসহ হেলালকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। একপর্যায়ে তারা হেলাল-কে জানান এসপি সাহেবের তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান হয়েছে। এসপি সাহেবকে ম্যানেজ করতে না পারলে ব্যান্ডরোলসহ হেলালের নামে মামলা দিতে হবে। পুলিশ কর্মকর্তারা হেলালকে আরো বলেন, এসপি সাহেবকে ম্যানেজ করে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ২ কোটি টাকা লাগবে।

একপর্যায়ে ভয়ে ২৫ লাখ টাকা দিতে রাজি হন হেলাল। এরপর ওই রাতেই হেলাল ৯ লাখ টাকা সংগ্রহ করে তাদের হাতে দেন এবং বাকি টাকা পরে দেয়ার কথা জানান। কিন্তু অবশিষ্ট ১৬ লাখ টাকা দিতে টালবাহানা করতে থাকেন। এরপর ১১জুলাই বগুড়ার এসপি আলী আশরাফ ভুঞার বদলির আদেশ হয়। ‘এসপি সাহেব’ চলে যাচ্ছেন, তাঁকে টাকা দিতে হবে জানিয়ে উক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হেলালকে চাপ দিতে থাকেন। এরপর ১৩ জুলাই হেলাল তাঁর এক পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে বিষয়টি বগুড়ার পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। ঘটনা জানার পর পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিক হেলালকে অফিসে ডেকে বিস্তারিত শোনেন এবং হেলালের কাছ থেকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ নেন।

বগুড়া পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা জানান, ওই ব্যাবসায়ীর কাছ থেকে নেয়া ৯ লাখ টাকা গত ১৪ জুলাই সন্ধ্যার পর ফেরত দিয়েছেন ডিবি পুলিশের অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তা। অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরীকে প্রধান এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুর রশিদ ও কোর্ট পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জীকে সদস্য করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় শনিবার (২৪ জুলাই) রাতে এসআই শওকত আলমকে সাময়িক বরখাস্ত এবং পরিদর্শক এমরান মাহমুদ তুহিনকে রাজশাহী রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত করে বদলী করা হয়েছে। রবিবার (২৫ জুলাই) তাদের দুজনকেই রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআর এফ) রাজশাহীতে বদলি করা হয়েছে।

ডিবি পুলিশের দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ও শাস্তি স্বরূপ বদলী প্রসঙ্গ বগুড়া শহরে অালোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। ডিবি পুলিশের দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডঃ আব্দুল লতিফ ববি বলেন, বগুড়ায় ডিবি পুলিশ সবথেকে বড় আতঙ্কের নাম। ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সমস্যার কারণে ডিবি পুলিশের এই ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে, অন্যথায় এসব কেউ জানতেই পারতো না। এমন ঘটনা বগুড়ায় নতুন নয়। থানা-ফাঁড়ি সহ বিভিন্ন পর্যায়ের কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অসৎ কর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বগুড়া ডিবি পুলিশসহ গোটা বিভাগের আমূল পরিবর্তন জরুরী। বলতে দ্বিধা নেই, বিগত বেশ ক'বছরে বগুড়া পরিণত হয়েছে অসৎ লুটেরা রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের স্বর্গরাজ্যে। এরা একে-অপরকে ব্যবহার করে সুবিধা আদায় করে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বগুড়া থেকে বদলী হলেও যেকোন উপায়ে আবার ফিরে আসেন। অখ্যাত ভুঁইফোড় পত্রিকার সাংবাদিকের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ প্রিন্ট মিডিয়ায় তাদের পক্ষে প্রশংসা সূচক সংবাদ প্রকাশ করে নেয়া এখন নিয়মিত চর্চায় পরিণত হয়েছে। বগুড়ায় প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের অনেক মানবিক কর্মকান্ডের সুনাম বিনষ্ট হচ্ছে কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জন্য।

(আর/এসপি/জুলাই ২৭, ২০২১)