ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা : বয়স বুঝে গরমের দিনের খাবার মেন্যু তৈরি করা উচিত। তো দেখে নেওয়া যাক কোন বয়সী মানুষের কী ধরনের খাবার প্রয়োজন :

পাঁচ থেকে পনেরো

বাড়ন্ত বয়স৷ স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার পথে রোদের চোখ রাঙানি সহ্য করতে হয়৷ অনেকেই তাড়াহুড়োয় না খেয়ে স্কুলে চলে যায়৷ তারপর জলের বদলে এন্তার কোলড ড্রিংকস আর পুষ্টিকর টিফিনের বদলে জাঙ্ক ফুড৷ ডিহাইড্রেশন এবং ভিটামিনের অভাব হয় এর থেকে৷

ডায়েট হবে তাই প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ৷ ওট, আটার রুটি-সবজি, পরিজ, ম্যুসেলি ব্রেকফাস্টে৷ টিফিন বক্সে কেক, প্যাটিস, পিত্‍জার জায়াগায় আসুক ভেজ ফ্রায়েড রাইস (গাজর, ফুলকাপি, ব্রক্কোলি, চিজ দেওয়া), পাস্তা, ব্রাউন ব্রেড স্যান্ডুইচ (ফল বা টম্যাটো, শসা দিয়ে বানানো)৷ বিকেলে একপেট খিদের মুখে অনেকেরই খাবার ভাত৷ গরমে রোদ থেকে এসেই ভারী কিছু খাওয়ার আগে প্রথমে জল, সরবত, নুন, চিনির জল বা ও.আর.এস, ফলের রস, সবজির জ্যুস (স্যুপ নয়) খেলে জলের ঘাটতি মিটবে৷ এরপর ভাত, রুটি, দই-চিঁড়ে, মুড়ি, হোয়াইট পপকর্ন তো রইলই৷ সন্ধেয় দুধ, ছাতুগোলা, হেলথ ড্রিকস বা হোল মিল্ক৷ রাতে রুটি (২-৪টি), তরকারি, ডাল, মাছ, শাক৷ এই খাবার কম বেশি চলবে কুড়ি বছর পর্যন্ত৷


কুড়ি থেকে ত্রিশ

কেজো সময়৷ কাজের খাতিরে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা৷ কিংবা সারাক্ষণ এসি ঘরে বসে থাকা৷ চড়া রোদ-এসির যুগপত্‍ আক্রমণে এঁরা কাবু হয়ে পড়েন সর্দি-গর্মিতে৷ এছাড়া, ডিহাইড্রেশন, ভার্টিগো (মাথা ঘোরা), ব্ল্যাক আউট (আচমকা চোখে অন্ধকার দেখা), মাসল ক্র্যাম্প (শরীরের পেশীতে টান বা ব্যথা), নশিয়া (বমি ভাব), খেতে ইচ্ছে না হওয়া, জন্ডিস, লিভার প্রবলেম, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম তো আছেই৷ মেয়েরা বেশি ভোগেন, সানবার্ন, পিম্পল, ড্রাই স্কিন, ইউরিনের ভল্যুম কমে যাওয়ার সমস্যায়৷ এসবের প্রথম ও প্রধান দাওয়াই অফুরন্ত জল৷ তা বলে মোটেই ফ্রিজের ঠাণ্ডা জল নয়৷

অনেকেই জানেন না, প্রচুর পরিমাণে ঠাণ্ডা জল খেলে এক সময় শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কমে যায়৷ এতে হজমের গণ্ডোগোল হয়৷ তাই স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা জল পান করুন৷ জোর দিন ফল, সবজির উপর৷ যেমন, সকালে প্রথমে এক গ্লাস তরমুজ, মুসাম্বির রস বা টম্যাটোর জ্যুস৷ তারপর দই-ওটস, দই-চিঁড়ে, রুটি তরকারি খেয়ে বেরিয়ে পরুন৷ লাঞ্চবক্সে ভরে নিন ভাত, স্যালাড, সবজি বা ওটসের খিচুড়ি৷ সন্ধের জন্য হালকা বেভারেজ ডাবের জল বা ছানার জলে নুন, চিনি মেশানো সরবত৷ সঙ্গে ফ্রুট স্যালাড, শুকনো খোলায় ভাজা মুড়ি, চিঁড়ে অল্প ছোলা বা বাদাম মেশানো৷ রাতে ভাত বা রুটি, সবজি, মাছ, ডাল৷

পঁয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চান্ন

অনেকে ঘরে থাকেন৷ অনেকে কাজে ব্যস্ত৷ এই বয়সে শরীরে ক্যালোরির চাহিদা অর্ধ্বেক হয়ে যায়৷ দরকার পরে হাই ফাইবার, বিশেষ কিছু ভিটামিন, মিনারেলস এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের৷ তাই পরিশ্রমের পরিমাণ বুঝে ক্যালোরি ইনটেক করুন৷ সাধারণত, এঁদের গরমের সমস্যা ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন, ডায়রিয়া বা কনস্টিপেশন, মাইগ্রেন, মাসল ক্র্যাম্প৷ ডায়েট, ঘুম থেকে উঠে এক কাপ ঈষদুষ্ণ গ্রিন টি-র সঙ্গে ফাইবার বিস্কিট৷ এরপর বাড়িতে থাকলে রুটি তরকারি, ওটস বা ডালিয়ার খিচুড়ি৷ কাজে বের হলে ভাত, ডাল, সবজি বা মাছ (দুটো একসঙ্গে নয়)৷ দুপুরে রুটি, তরকারি৷ বিকেলে মুড়ি-বাদাম, ছাতু, দই-ওটস, সবজির স্যুপ৷ চা খেলে গ্রিন টি৷ রাতে ভাত বা রুটি৷ সঙ্গে সবজি, ডাল বা মাছ তো থাকবেই৷ কনস্টিপেশন কমাতে শোওয়ার সময় ইসবগুল৷

ষাটোর্ধো

গরম পড়লেই খাবারের প্রতি এঁদের দারুণ অনীহা৷ হতে পারে কনস্টিপেশন বা ডায়রিয়া, লিভারের সমস্যা, স্ট্রোক, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, হাই ব্লাডপ্রেশার৷ সমস্যা এড়াতে এঁরা লিক্যুইড ফুডের উপর জোর দিতে পারেন৷ ডাল ,সবজির ঝোল, দুধ, দই, ডাবের জল, স্যুপ, জ্যুস খান বারে বারে৷ গরমের সব ফল আম, জাম, পেঁপে, আনারস, তরমুজ, ন্যাসপাতি খেতে পারেন৷ আর ইন্সট্যান্ট এনার্জি বুস্টিংয়ের জন্য হাতের কাছে রাখুন খেজুর, কিশমিশের মতো ড্রাই ফ্রুট৷

(ওএস/এইচ/এপ্রিল ২৩, ২০১৪)