চাঁদপুর প্রতিনিধি : আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের সোনালী যুগেও ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে আদিম চিকিৎসা প্রদ্ধতি ঝাড় ফুঁক ও তাবিজ কবজকে পুঁজি করে কবিরাজ আবু তৈয়ব মানুষকে ধোঁকা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। হযরত মাদ্দাখাঁ (রঃ) মাজার কমপ্লেক্সের ভেতর আস্তানা গেড়ে এ ধরনের প্রতারণা করায় বিষয়টি প্রশ্নবৃদ্ধ হয়েছে। খোদ উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে চিকিৎসার নামে এ ধরনের অপচিকিৎসা করায় জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, চিকিৎসা শাস্রে তার কোনো সনদ নেই। তবু তিনি সর্বরোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন বলে দাবি করেন। এমবিএস ডাক্তারদের মতই সিরিয়াল দিয়ে ব্যবস্থা ফি নিয়ে রোগী দেখে থাকেন। কোনো রোগী চিকিৎসা সেবা না নিলেও তাকে পরামর্শ ফি দিতে হয়। শুধু তাই নয়, শত শত নারীর মাঝখানে বসে চিকিৎসা সেবার নামে নানা অপকর্ম চালিচ্ছে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হযরত মাদ্দাখাঁ (রঃ) মসজিদ ও মাজার শরীফকে তার এই অপকর্মের দ্বারা প্রশ্ন বৃদ্ধ হবে বলে মসজিদ ও মাজার জিয়ারতে আসা অনেক ভক্ত ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

সরেজমিনে জানা যায়, আবু তৈয়ব কবিরাজ হযরত মাদ্দাখাঁ (রঃ) মসজিদ কমপ্লেক্স কর্তৃক পরিচালিত নূরানী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মাত্র চার হাজার টাকা মাসিক বেতন ধার্য থাকলেও তিনি প্রতিদিন শতাধিক রোগীর দেখার নামে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তার আস্তানায় গিয়ে দেখা যায়, হযরত মাদ্দাখাঁ (রঃ) মসজিদ ও মাজার শরীফ জিয়ারতে আসা ভক্তবৃন্দকে নারী ও পুরুষ দালাদের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের উপকার হয় এমন গুণকৃত্তন বর্ণনা করে তার কাছে নিয়ে এসে নাম লেখানো হয়। তারপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। সুন্দরী নারী হলে তাকে আরো একটু বেশি সময় বসতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী রোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিকের কাছে অভিযোগ করেন এ ভণ্ড চিকিৎসক শত শত নারীর মাঝখানে বসে আমাকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেছে। অথচ কোনো মহিলা এর কোনো প্রতিবাদ করেনি। এমন মন্তব্যে সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে ঐ নারী বিষয়টি খোলে বলেন। ঐ ভণ্ড প্রতারক আমাকে বলেছে। এই নারী এখানে সব সময় সব কাজ হয় না, আকাম করার নিয়তে এসে থাকলে পরে দেখা করবেন। এ অভিযোগ সম্পর্কে কবিরাজ তৈয়বকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো কথা না শুনে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে সাংবাদিককে রোগী মনে করে তিনি যা খেলা দেখালেন তা সত্যিই অবাক হওয়ার মতো।

রোগী দেখার নামে তৈয়ব এক অদ্ভুত প্রদ্ধতির আবিষ্কার করেছেন। জায়নামাজের উপর হাত রেখে তিনি হাতকে এদিক সেদিক ঘুরিয়ে রোগীর পিতা-মাতার নাম নিয়ে বিভিন্ন কলা কৌশলে কথা বলে গ্রামের সহজ-সরল নারীদেরকে বোকা বানিয়ে পানি পড়া, তাবিজ, ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে ৫শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত তাবিজের হাদিয়া নিয়ে থাকেন। উপস্থিত এক নারী একটি তাবিজের হাদিয়া ৫ হাজার টাকা বিষয়টি নিশ্চিত করলে তিনি তাকে চোখ রাঙ্গিয়ে সাশিয়ে দেন। প্রায় ২ ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কবিরাজ তৈয়ব বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন এবং সাথে সাথে তার চিকিৎসার ধরন পাল্টিয়ে দেন। হঠাৎ করে তিনি টাকা ছাড়া রোগী দেখতে শুরু করেন।

তৈয়বের কবিরাজির বিষয়টি নিয়ে হযরত মাদ্দাখাঁ (রঃ) মসজিদ কমপ্লেক্সের মোতাওল্লী কাজী খায়রুল আলমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, কবিরাজ তৈয়ব আমাদের কমপ্লেক্সের অধীনে নূরানী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। পাশপাশি তিনি কবিরাজিও করে থাকেন। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী এখানে আসে সত্য বটে মানুষ উপকার পায় কি পায় না তা আমার জানা নেই।

মসজিদ কমপ্লেক্সের সানী ইমাম মাওঃ শামছুল হুদার সাথে কথা বললে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। উল্লেখ যে, হযরত শাহ্জালাল (রঃ)সহ মোগল আমলে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় যে ৩৬৫ জন আউলিয়া বা অলি-দরবেশ ইসলাম প্রচার করার জন্য বাংলাদেশে আসেন হযরত মাদ্দাখাঁ (রঃ) তাদের মধ্যে একজন। ১১৪৫ বাংলা অর্থাৎ সে মোগল আমল থেকে প্রসিদ্ধ একজন অলীর নামে নির্মিত মসজিদ ও তারই মাজার শরীফের আঙ্গিনায় এ ধরনের অপকর্ম মেনে নেয়া যায় না। তাছাড়া প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষের দিকে হযরত মাদ্দাখাঁ (রঃ) বার্ষিক ওরস শরীফ ও মাহফিলে হাজার হাজার লোক সমবেত হয়। এ পবিত্র স্থানে যে কোনো প্রতারণা বন্ধ করতে মসজিদ ও মাজারের ভক্তগণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

(এমজে/এইচআর/এপ্রিল ২৩, ২০১৪)