চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : চলনবিলে এখন বর্ষা মৌসুম। ফলে সেখানকার বিশাল জলরাশিতে পেশাদার ও শৌখিন মৎস্য শিকারিদের মাছ শিকারের ধুম পড়েছে। সেইসঙ্গে চলনবিলের মাছ ধরার নানা উপকরণের মধ্যে চাঁই (খৈলশুনী) তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কারিগররা। ব্যাপক চাহিদার কারণে ঘরে বসেই মাছ শিকারের যাবতীয় সামগ্রী তৈরি করা যায় এবং কম সময়ে বেশি আয় হওয়ায় অনেকেই বাঁশের চাঁই তৈরির কাজকে বেছে নিয়েছেন।

চলনবিলের চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল, ছাইকোলা, হরিপুর, পার্শ্বডাঙ্গা, নিমাইচড়া, ভাঙ্গুড়ার খানমরিচ, গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবরিষা, চলনালী, শিধুলী, চরকাদহ, উদবারিয়া, পোয়ালশুড়া, সোনাবাজু, বড়াইগ্রাম উপজেলার মাড়িয়া, শ্রীরামপুর ও তাড়াশ, রায়গঞ্জসহ বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে এখন এ চাঁই তৈরির ধুম পড়েছে। চলনবিলের রেলবাজার, ছাইকোলা, হান্ডিয়াল, মির্জাপুর, চাঁচকৈর, কাছিকাটাসহ বিভিন্ন হাটে দেখা গেছে সদ্য তৈরি চাঁইয়ে ভরে গেছে।

খৈলশুনী (চাঁই) তৈরির কারিগররা জানান, তারা এই চাঁই তৈরির কাজ করেন। দিনে দুই থেকে তিনটি খৈলশুনী তৈরি করেন। তিনি আরও জানান, প্রতিটি খৈলশুনী বা চাঁই প্রকার ভেদে ২০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়। আর ২০টি খৈলশুনী (চাঁই) তৈরি করতে প্রায় দুই সপ্তাহের মতো সময় লাগে।

এলাকা ভেদে হাটবারে বিশেষ করে চলনবিলের চাটমোহর রেলবাজার (অমৃতকুন্ডা) রবিবার হাটে এবং চাঁচকৈড় শনিবার ও মঙ্গলবারের হাটে বেশি বিক্রি হয়। তারা জানান, আগের তুলনায় বর্তমানে খৈলশুনীর দাম একটু বেশি। এর কারণ বাঁশের দাম বেড়েছে অনেক। বর্তমানে বিলের বড় মাছ ধরতে পেশাদার জেলেরা এক থেকে দেড় হাজার টাকায় চাঁই কিনে থাকেন। তবে বড় চাঁই বা খৈলশুনী তৈরিতে খরচ পড়ে যায় দেড় হাজার টাকার বেশি। যাদের নিজেদের বাঁশের ঝাড় বা বাগান আছে এবং তালগাছ বেশি আছে এমন এলাকায় খরচের মাত্রা অনেকটা কমে আসে।

বিক্রেতারা জানান, পাইকারী ২০টি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। তারা সেগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে। পাইকারি দরে দূর থেকে আসা বেপারীর কাছে বিক্রি করা হয় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা।
খৈলশুনী, ছাঁই, ধুন্দি, ভাইর, বিত্তি নানা রকমের মাছ শিকারের সামগ্রী হাটে ওঠে। বেপারীরা ক্রেতাদের কাছে প্রতিটি খৈলশুনী ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, বেশি মজবুতগুলো প্রকার ভেদে ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি করেন। আর দেশের শৌখিন ও পেশাদার মৎস্যজীবীরা তা কিনে নেন। চলনবিলের ক্ষুদ্র এ কুটির শিল্প রক্ষায় সরকারি সহযোগিতার জন্য উদ্যোগ প্রয়োজন বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।
(এসএইচএম/এএস/সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৪)