কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: তিন শতাধিক ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের সঞ্চরের জমানো ১৫ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে পল্লী উন্নয়ন সমিতি নামের একটি এনজিও। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ গ্রাহকরা বৃহস্পতিবার সকালে টাকা ফিরে পাওয়ার দাবিতে লালুয়ার বানাতিবাজারের ওই সংস্থার অস্থায়ী অফিসের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে।

সরেজমিনে লালুয়া ইউনিয়নে গিয়ে জানা যায়, গত রোববার পল্লী উন্নয়ন সমিতির ৪ কর্মকর্তা পরিচয়ে রফিকুল ইসলাম, ফয়সাল রহমান রফিক, অসিম ও আরিফুর রহমান আরমান লালুয়ার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে জরুরী ঋন সহায়তা দেয়ার নাম করে তাদের সঞ্চয় জমা দিতে বলে। তাদের দাবি অনুযায়ী, ২২’শ টাকা জমা দিলে ২০ হাজার টাকা, ৩২’শ টাকা জমা দিলে ৩০ হাজার টাকা, ৫২’শ টাকা জমা দিলে ৫০ হাজার টাকা ও ১০ হাজার টাকা জমা দিলে এক লাখ টাকা ঋণ দেয়ার আশ্বাস দেয়। তাদের কথা মতো সরল বিশ্বাসে মঙ্গলবার ও বুধবার ইউনিয়নের তিন শতাধিক মানুষ প্রায় ১৫ লাখ টাকা সঞ্চয় জমা করে। এ টাকা জমার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ওই কর্মকর্তারা পালিয়ে যায়।

লালুয়ার চিংগড়িয়া গ্রামের মনজু হাওলাদার জানান, তিনি একলাখ টাকা ঋণ পাওয়ার আশায় অন্যের কাছ থেকে ধার করে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। একইভাবে ইউনিয়নের কামাল ফকির ৩৩’শ টাকা, রিপন হাওলাদার ৫২’শ টাকা, শাহিন হাওলাদার ২২’শ টাকা, মনিরুল হাওলাদার ২২’শ টাকা, নয়ন হাওলাদার ৩২’শ টাকা, রাজা হাওলাদার, ২২’শ টাকা, তোফা হাওলাদার ৩৩’শ টাকা, চারিপাড়া গ্রামের মাসুদ ১০ হাজার ২’শ টাকা, শিপন গাজী ২২’শ টাকা, রিগান ২২’শ টাকা, কল্পনা ২২’শ টাকা, মাজেদা বেগম ২২’শ টাকা, বকুল বেগম ৩২’শ টাকা, মোর্শেদা ২২’শ টাকা, মিজানুর ৫ হাজার টাকা, রানী বেগম ছয় জনের নামে দিয়েছেন ১৪ হাজার টাকা। এভাবে দ্রুত ঋণ পাওয়ার আশায় শত শত মানুষ ধার দেনা করে সঞ্চয়ের টাকা জমা দিয়েছেন।

মাটিকাটা শ্রমিক মাজেদা বেগম জানান, তিনি রাস্তায় মাটি কেটে যে টাকা সঞ্চয় করেছেন ঘর মেরামতের জন্য টাকা দরকার তাই জরুরী ঋণ পাবো এই আশায় ২২’শ টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু বৃহস্পতিবার অফিসে এসে দেখি অফিসে অফিস তালাবদ্ধ। কোন কর্মকর্তা নেই। এনজিও কর্মকর্তারা পালিয়েছে এ ঘটনা অন্য ঋণ গ্রহিতারা জানতে পেরে অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ মিছিল করে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মজিবর রহমান হাওলাদার জানান, ইউনিয়ন পরিষদকে না জানিয়ে ওই প্রতারকরা গ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।

লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মীর তারিকুজ্জামান তারা জানান, এনজিও কর্মকর্তার বেশে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র ইউনিয়নের নিরীহ মানুষের সর্বনাশ করেছে। এ ঘটনাটি তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওকলাপাড়া থানায় জানিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের টাকা উদ্ধারের জন্য প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তিনি এ ঘটনা শুনে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন। অভিযুক্ত এনজিও এবং প্রতারক চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এমকেআর/এএস/ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৪)