বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : ‘একজন অদক্ষ ডাক্তারের চেয়ে, একজন সন্ত্রাসীকে দিয়ে শাহবাজপুরের মানুষকে হত্যা করা উত্তম’- এ ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন হাতুড়ে ডাক্তারদের উৎপাতে অতিষ্ঠ মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সীমান্তবর্তী শাহবাজপুর অঞ্চলের সচেতন যুব পরিষদের নেতারা।

দীর্ঘদিন ধরে শাহবাজপুর বাজারে কতিপয় ডাক্তার নামধারীরাএম.বি.বি.এস সহ বিভিন্ন ডিগ্রীর সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেদারসে রোগী দেখার রমরমা ব্যবসা করে আসলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের টনক নড়েনি। বাধ্য হয়ে এলাকার সচেতন যুব পরিষদ হাতুড়ে ডাক্তারদের হাতুড়ে চিকিৎসা বন্ধ সহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। এরপরও হাতুড়ে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন না করা হলে গণআন্দালনের হুমকি দিয়েছে সচেতন যুব পরিষদ।

সচেতন যুব পরিষদের লিখিত অভিযোগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর শাহবাজপুর বাজারে দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় ডাক্তার নামধারীরা এম.বি.বি.এস সহ বিভিন্ন ডিগ্রীর সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেদারসে রোগী দেখার রমরমা ব্যবসা করে আসছেন। এ সকল হাতুড়ে ডাক্তাররা ঔষধ কোম্পানীর লোকদের খুশী করতে গিয়ে প্রেসক্রিপশনে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় ঔষধ লিখে দেন। ফলে অসহায় রোগীরা ঔষধ কিনতে গিয়ে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হন অপরদিকে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ডাক্তার নামধারী মো. রেজাউল করিম মো. আব্দুর রাজ্জাক এস.এম জসিম উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, মকসুদ আলী তালুকদার, সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া, এম.নূরুল আম্বিয়া, মেঘনাথ রুদ্র পাল, আব্দুল জব্বার বি,সি,এস ধর (বিধান). মো. সাঈদ আল হেলাল সহ অনেকে নিজের নামে ডা. লাগিয়ে এম.বি.বি.এস সহ বিভিন্ন ডিগ্রীর সাইনবোর্ড লাগিয়ে বিভিন্ন ফার্মেসীতে চেম্বার খুলে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। যেন দেখার কেউ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদের মধ্যে অনেকেই কয়েকদিন আগে শিক্ষক, রং মিস্ত্রী, মোদি দোকানদার ছিলেন। তারা এখন রীতিমতো সাইনবোর্ড লাগিয়ে নিজেকে এমবিবিএস পাস করা ডাক্তার ! পরিচয় দিয়ে ডাক্তারী জাহির করার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।

সচেতন যুব পরিষদের আহবায়ক কামরুল হাসান সুমন বলেন,‘ শাহবাজপুর বাজারে অধিকাংশ ডাক্তার নামধারী শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া অবৈধভাবে নিজের নামের আগে ডা. শব্দটি বসিয়ে নামের শেষে এম.বি.বি.এস সহ বিভিন্ন ডিগ্রী সম্বলিত সাইনবোর্ড লাগিয়ে হরহামেশা রোগী দেখছেন। এসব হাতুড়ে চিকিৎসকের কারনে এলাকার সাধারন জনগনের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। আমরা সচেতন যুব পরিষদের পক্ষ থেকে গত ১৮ আগষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রী, মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক সহ জেলা ও উপজেলার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে প্রায় দুই হাজার লোকের স্বাক্ষর সম্বলিত লিখিত অভিযোগ করলেও অদ্যাবধি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয পদক্ষেপ না নিলে গন আন্দোলন মাধ্যমে এলাকা থেকে হাতুড়ে ডাক্তারদের উৎখাত করা হবে।’

এ ব্যাপারে রবিবার বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. আজিম উদ্দিন এ প্রতিনিধিকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলেছেন। তিনি দুএকদিনের মধ্যে অভিযুক্তকারীদের কাছে নোটিশ পাঠাবেন। নোটিশে আগামী শনিবার(১৩ সেপ্টেম্বর) অভিযুক্তকারীদের প্রয়োজনীয় কাগজাদি নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ বিষয়ে সিভিল সার্জনও আলাদাভাবে তদন্ত কমিটি করে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

(এলএস/এএস/সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৪)