জামালপুর প্রতিনিধি : দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা আর দুর্ভোগের অবসান ঘটিয়ে শুরু হলো জামালপুরের মাদারগঞ্জের জামথল থেকে বগুড়ার সারিয়াকান্দি কালিতলা নৌরুটে ফেরি চলাচল।

বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপির ফেরি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সুগম হলো এই নৌ-রুটটি।

বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ মির্জা আজম এমপি, বিআইডব্লিউটিসি'র চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. তাজুল ইসলাম, বিআইডব্লিউটিএ'র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক, জামালপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, সাধারন সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরী, বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ মজিবুর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু প্রমুখ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফেরি চলাচল শুরুর মধ্যদিয়ে যমুনার নৌরুটে ফের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, ভোগান্তি লাঘবসহ উন্নয়ন হবে মানুষের জীবনযাত্রার মান। একই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের মানুষজনের বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে চলাচলের প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ কমল। এতে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর চাপ অনেকটাই কমবে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাদারগঞ্জের জামথল খেয়াঘাট থেকে যমুনা নদীতে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতো। নৌ-ফেরি চালু হলে এ নদীর ওপারের মানুষ উৎপাদিত কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য পণ্য অল্পসময় ও স্বল্পখরচে রাজধানীসহ আশপাশের জেলায় নিতে পারবেন।

ফেরিটি চালুর সিদ্ধান্ত দীর্ঘদিন ঝুলে ছিলো। সম্প্রতি নৌ-রুটটি চালুর ব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ আসনের এমপি আলহাজ মির্জা আজমের প্রচেষ্টায় এ নৌপথে সি-ট্রাক (ফেরি) চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

চলতি বছরের মে মাসে রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করতে একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল মাদারগঞ্জ ও বগুড়ার সারিয়াকান্দি এলাকা পরিদর্শন করে ফেরিঘাট নির্মাণ, সড়ক যোগাযোগ স্থাপন, নাব্যতা ফেরাতে নদী খননসহ নদী সংস্কার ও উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণের প্রাক-সম্ভবতা যাচাই সম্পন্ন করে। সরকারের পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি সহায়তা প্রদানকারী সরকারি জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং-এর দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনা ও নানাদিক পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি এ রুটে ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য কারিগরি দিক বিবেচনা করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আইডব্লিউএমের পরামর্শক মহিউদ্দিন পাটোয়ারী। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এই ১৬ কিলোমিটার রুটে ফেরি সার্ভিস চালুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

জানা যায়, একসময় বাহাদুরাবাদ-বালাসী রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এরপর বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলার মানুষ জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের পরিবর্তে মাদারগঞ্জ হয়ে নৌকায় যমুনা নদী পার হয়ে বগুড়া হয়ে যাতায়াত শুরু করে। বগুড়াসহ উত্তরবঙ্গের অন্ততঃ ১০ জেলার হাজার হাজার মানুষ গাদাগাদি করে নৌকায় সারিয়াকান্দির কালীতলা বা মথুরাপাড়া ঘাট থেকে খেয়া নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণ করতেন। কালীতলা ঘাট থেকে মাদারগঞ্জ যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগতো।

নবচালুকৃত সি ট্রাকের ইজারাদার জাহিদুর রহমান উজ্জ্বল তালুকদার জানান, দীর্ঘদিন পর হলেও মাদারগঞ্জ-সারিয়াকান্দি নৌপথে ফেরি সার্ভিস চালু হলো। এতে এলাকার জনগণ উল্লাসিত।

তিনি আরো জানান, সি-ট্রাকযোগে যাতায়াতে ২-৩ ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হবে। মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে পৌঁছা যায়। সি-ট্রাকে ২০০ যাত্রী, ২-৩টি প্রাইভেট গাড়ি, ১৫টি মোটরসাইকেল পারাপার করা সম্ভব। এতে জনপ্রতি ভাড়া হবে ১০০ টাকা।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোশারফ জানান, বগুড়ার মানুষ খুব আনন্দিত অল্প সময়ে খুব সহজে কৃষি পণ্য বৃহত্তর ময়মনসিংহ নিয়ে যেতে পারবে। এতে করে দুই পাড়ের মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যে উপকৃত হবে। দুই পাড়ের মানুষের বন্ধন আরও শক্তিশালী হবে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ।মির্জা আজম জানান, দু'পাড়ের মানুষের দুঃখ-দুর্দশার দিন কেটে গেল। ফেরি চালু হওয়ায় মানুষের সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হবে।

তিনি আরো জানান, যাত্রী ও ছোট গাড়ি পারাপারের মধ্যদিয়ে ফেরি সার্ভিস চালু হলো। তবে শিগগিরই বড় যানবাহন পারাপার শুরু হবে। এ জন্য বগুড়া-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জামালপুর–মাদারগঞ্জ থেকে জামথল পর্যন্ত এলজিইডির ১২ ফুট সড়ক ২৪ ফুটে উন্নীত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে বলেও তিনি জানান।

(আরআর/এসপি/আগস্ট ১২, ২০২১)