জাহেদ সরওয়ার, কক্সবাজার : গত শীত মৌসুমের পর কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশের দেখা আর তেমন মিলেনি। তার উপর গত মে মাসের শেষ সপ্তাহ হতে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন ইলিশ শিকারে সরকারের নিষেধাজ্ঞা ছিল। এসব মিলিয়ে বাজারে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ছিলো মাছের রাজা ইলিশের। কিন্তু কয়েকদিন ধরে কক্সবাজার ফিশারি ঘাটে ফেরা ফিশিং ট্রলার গুলো থেকে নামছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। এতে দামও ভালো পাচ্ছেন ট্রলার মালিকরা।

কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে তীরে ফেরা ট্রলার থেকে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ নেমে অবতরণ কেন্দ্র টইটুম্বুর হওয়ায় জেলেদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। জেলেরা ১০ দিনের জন্য সাগরে গেলেও কয়েকদিনের মধ্যেই ট্রলারভর্তি ইলিশ নিয়ে কক্সবাজার মৎস্যকেন্দ্রের ঘাটে ফিরছেন। এত ইলিশ ধরা পড়ায় কক্সবাজারে মৎস্য আড়তদার, ফিশিং ট্রলার মালিক, মাঝি ও জেলেদের বাড়িতে যেন খুশির বন্যা বইছে।

বর্তমানে ৬০০-৭০০ গ্রাম ইলিশ মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, এক কেজি ইলিশ ১২০০ টাকা, এক কেজি ২০০ গ্রাম ইলিশ ১৩০০-১৪০০ টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের ইলিশ সর্বোচ্চ মূল্য ১৬৫০ টাকা, টুনা মাছ ২০০-২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মৎস্য ব্যবসায়ী আমির হোসেন, কফিল উদ্দিন ও আলী মিয়া বলেন, সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সুফল মিলছে এখন। যেভারে ইলিশ ধরা পড়ছে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে বিদেশেও ইলিশ রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এখন ইলিশের দাম একটু বেশি হলেও কিছুদিনের মধ্যে দাম সবার নাগালের মধ্যে চলে আসবে।

ফিশিং ট্রলার থেকে মাছ ওঠাতে ব্যস্ত শ্রমিক আবদুল জলিল (৩৫) জানান, এতদিন অনেক ধারদেনা করতে হয়েছে সংসার চালাতে। কিন্তু মাছ ধরা শুরু হওয়ায় গত এক সপ্তাহে বেশ ভালো রোজগার হয়েছে। দৈনিক এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকাও আয় হচ্ছে।

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সাগরে সামুদ্রিক মাছ ও ইলিশ প্রজননের মৌসুমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইলিশ বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে থাকা, ট্রলার মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখন আশার সঞ্চার হয়েছে।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এহ্‌সানুল হক বলেন, সরকারের নানামুখী পরিকল্পনা, কঠোর আইন প্রয়োগ ও জেলেদের সরকারি সাহায্য বাড়ার কারণে দিন দিন সাগরে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। মাছের সরবরাহ বাড়ায় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বেড়েছে।

বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কক্সবাজার কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর শফিকুর রহমান জানান, এ বছর জেলায় ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর আহরণ হয়েছিল ১৫ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন। এখন যে হারে ইলিশ ধরা পড়ছে, এতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করা যায়।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এহ্‌সানুল হক বলেন, সরকারের নানামুখী পরিকল্পনা, কঠোর আইন প্রয়োগ ও জেলেদের সরকারি সাহায্য বাড়ার কারণে দিন দিন সাগরে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। মাছের সরবরাহ বাড়ায় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বেড়েছে।

বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কক্সবাজার কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর শফিকুর রহমান জানান, এ বছর জেলায় ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর আহরণ হয়েছিল ১৫ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন। এখন যে হারে ইলিশ ধরা পড়ছে, এতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করা যায়।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ইলিশ পাঠানো কাজ শুরু করে দেয় জেলেরা। সরগরম হয়ে উঠেছে ফিশারি ঘাট তথা কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি। কম-বেশি দামে বেচা-বিক্রি হওয়ায় কাজের লোকদেরও যেন দম ফেলার নেই। কেউ বরফ ভাঙ্গছে, কেউবা ইলিশ বিন্যাস করে বরফজাত করে রপ্তানির জন্য তৈরি করছে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিতে অনেক আড়তদার ইলিশ বোঝাই ট্রাক সারি করে রেখেছেন।

(জেএস/এএস/আগস্ট ১৩, ২০২১)