নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁয় ব্যাঙের ছাতার মত নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সমিতি। ওইসব সমিতি থেকে চড়া সুদে ঋণ দিয়ে সাধারণ মানুষকে সর্বশান্ত করা হচ্ছে। ওইসব সমিতির সুদারুদের পাল্লায় পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। তেমনী জেলার সরস্বতীপুর বাজারে নাম বিহীন সমিতি কর্তৃক ঋণ কার্যক্রমের নামে প্রতিদিনের কিস্তির ওপর লাখ লাখ টাকা সুদের ব্যবসা করে আসছে।

একদিকে সুদা অপরদিকে এসব সমিতির খপ্পড়ে পড়ে সর্বশান্ত হতে চলেছে এলাকার ব্যবসায়ীসহ সাধারণ লোকজন। ইতোমধ্যে সুদের টাকা দিতে গিয়ে জায়গা-জমি সর্বস্ব হারিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষক তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে আত্মগোপন করে আছেন। এছাড়া সুদারুদের টাকা দিতে না পেরে এক কীটনাশক ব্যবসায়ী বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপন করে আছেন।

সরস্বতীপুর বাজারের বক্কর নামে এক ভাংরী ব্যবসায়ী কথিত নাম বিহীন সমিতির প্রলোভনে পড়ে ঋণ নিয়ে কিস্তির নামে চড়া সুদের টাকা টানতে গিয়ে বর্তৃমানে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। আর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বুনে যাচ্ছে সুদারুসহ তথাকথিত এসব সমিতির মালিকরা। স্থানীয় সুত্র জানায়, জেলার মহাদেবপুর উপজেলার সরস্বতীপুর (কদমতলি) বাজারের চা ষ্টল মালিক আ. মান্নানের নের্তৃত্বে এলাকার ৫/৬ জন দাপুটে ব্যাক্তি অধীক মুনাফায় রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়ার আশায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাজারের অবসর প্রাপ্ত এক শিক্ষকের মার্কেটে ঘর ভাড়া নিয়ে নাম ও সাইনবোড বিহীন সমিতি গড়ে তুলে একজন মাঠকর্মীর মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার চড়া সুদের ব্যবসা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সরজমিনে গিয়ে কথিত ওই সমিতির অফিস ঘর বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে এসময় সরস্বতীপুর ও কদমতলি বাজারের কয়েক ব্যবসায়ী এবং নাম বিহীন সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছেন এমন কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপকালে একটি বিষয় নজরে পড়ে। বিষয়টি হলো, সমিতির গ্রাহককে দেয়া পাশ বইয়ে সমিতির কোন নাম দেয়া নেই এমনকি গ্রাহকরা পর্যন্ত সমিতির নাম জানেন না । তার পরও এলাকায় দাপটের সঙ্গে প্রভাব খাটিয়ে প্রকাশ্যে জমজমাটভাবে চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিনের কিস্তির নামে লাখ লাখ টাকার সুদের ব্যবসা।

নাম বিহীন ওই সমিতির এক গ্রাহক তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অভাবের কারণে কিস্তি দিতে বিলম্ব হলে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে থাকে সমিতির লোকজন। এক প্রশ্নের জবাবে গ্রাহকরা জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি ওই সমিতি পরিচালনা করেন। আমাদের এ বাজারে টিকে থাকতে হবে। আর এ জন্য আমরা অন্য সমিতি থেকে না নিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রতিদিনের কিস্তির ওপর টাকা নিচ্ছি এবং সঞ্চয়ও রাখি।

হোসেন আলী নামে এক ঋণ গ্রহিতা বলেন, আমি সংসারে অভাবের কারনে কয়েকটি কিস্তি দিতে না পাড়ায় নাম বিহীন ওই সমিতির লোকজনরা আমাকে মাদকের মামলায় ফাঁসিয়ে দিবে বলে হুমকি দিচ্ছে।

ওই নামবিহীন সমিতির আ. মান্নানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে, তিনি সুদের ওপর টাকা লাগানোর কথা স্বীকার করে প্রথমে বলেন, এটাঁ আমাদের ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠিত বনিক সমিতি। এ সময় ওই বাজারের বনিক সমিতির সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে চাইতেই আ. মান্নান অকপটে স্বীকার করেন তার অবৈধভাবে চালানো নিবন্ধন বিহীন সমিতির কথা। এছাড়া সমিতির বাইরে কতিপয় সুদ ব্যবসায়ীরা সাপ্তাহিক চড়া সুদ নেয়ার বিনিময়ে সাধারণ ব্যবসায়ী, চাকুরীজিবি ও লোকজনকে টাকা দিয়ে থাকে। এলাকার সুদ ব্যবসায়ীরা গ্রাহদেরকে টাকা দেয়ার সময় ব্যাংকের ফাঁকা চেকে সাক্ষর ও সাদা ষ্ট্যাম্পে সাক্ষর নিয়ে থাকে। ইতোমধ্যে ঋণের টাকার সুদ টানতে গিয়ে এলাকার খোর্দ্দনারায়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজিত কুমার জায়গা-জমি ও বাড়িঘর সর্বস্ব হারিয়ে সুদারুদের চাপের মুখে কর্মস্থলে যেতে পারছেনা। অপরদিকে জেলার নওহাটা মোড় বাজারে উদয় সেভিংস এ্যান্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, নিবন্ধন নং (৮৮৯) সহ পাশ্ববর্তী এলাকায় বেশকিছু সমিতি গড়ে উঠেছে। এসব সমিতির নিয়োজিত মাঠ কর্মীরা আশ-পাশের গ্রামসহ বাজারের দোকান গুলোতে প্রতিদিনের জন্য কিস্তির ওপরে ঋন দেয় এবং সঞ্চয় গড়ে তোলে। আর এই ঋণ আদায় করা হয় প্রতি হাজারে ১১/১২ টাকা প্রতিদিন এবং ২ টাকা সঞ্চয়সহ একশ’ দিনে পরিশোধ। এতে বছরে মোট চার দফায় সরল ভাবে ৮০% সুদ দিতে হয় গ্রাহকদের।

এ ব্যাপারে নওহাটা বাজারের উদয় সেভিংস এ্যান্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর পরিচালক কামরুল হাসান রিপনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করাহলে , তিনি এলাকায় প্রতিদিনের কিস্তির ওপর ঋন দেয়ার কথা শিকার করে বলেন, আমরা প্রতি এক হাজার টাকার বিপরীতে প্রতিদিন ১১ টাকা করে কিস্তি তুলি এবং ৪ মাস কিস্তি তোলার পর ওই ঋণ পরিশোধ হয়। প্রতিদিনের কিস্তির ওপর ঋণ দেয়ার সরকারি অনুমোদন আপনার প্রতিষ্ঠানের আছে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সমবায় সমিতির নিয়ম মোতাবেক আমাদের সমিতি চলছে। সমবায় অফিস সুত্রে জানা যায়, নিবন্ধনকৃত সমবায় সমিতি শুধু মাত্র রেজুলেশন ভিত্তিক সদস্যদের মাঝে ঋণদান ও সঞ্চয় নিতে পারে। তবে এই নিবন্ধন দিয়ে তারা এনজিও চালাতে পারবেনা। এলাকার সচেতন মহল সরস্বতীপুর বাজারের নাম বিহীন ওই কথিত সমিতি বন্ধ করাসহ অন্যান্য অবৈধ সমিতি গুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছেন।

(বিএম/এএস/মার্চ ০১, ২০১৪)