রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : জনবল সংকটে বিপর্যস্ত করোনা ডেডিকেটেড সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ফলে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেনা আড়াই শতাধিক রোগী। রোগীর স্বজনদের দাবি,সমস্যার সমাধান না হলে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন অনেকেই।

সামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার ৯৫১ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ৪ হাজার ৭৫৯ জন। বর্তমানে করোনা রোগী আছেন এক হাজার ১০৭ জন। তার মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে সামেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২ শতাধিক। বিপুল সংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে যেয়ে হিম-শিম খাচ্ছেন সামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ৫৮ জন চিকিৎসকের বিপরীতে চিকিৎসা দিচ্ছেন মাত্র ৩১ জন।

এ বিষয়ে সামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন রোগীর ছেলে ইয়াসির হোসেন জানান, সামেক হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছেনা। বিশেষ করে দুপুরের পরে কোন চিকিৎসককে খুঁজে পাওয়া যায়না। ইন্টার্ন চিকিৎসক দিয়ে চলে সামেক হাসপাতাল।

হাসপাতালে ওষুধের সংকটও তীব্র। লুমানা, ডেক্সাসহ করোনা রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ সরবরাহ করা হয় সীমিত আকারে। কোন কোন ক্ষেত্রে ওষুধ পানই না রোগীরা।

এ বিষয়ে সামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন করোনা রোগীর মেয়ে আসমা খাতুন জানান,ওষুধ প্রায় সময় পাওয়া যায়না। আমরা গরীব মানুষ। বাইরে থেকে কিনতে পারিনা। তাই অনেক সময় মাকে ওষুধ না খেয়ে থাকতে হয়। বিশেষ করে করোনা রোগীদের জন্য অপরিহার্য লুমনা ট্যাবলেট ও ডেক্সা ইনজেকশন সংকটের কথা উলে­খ করেন তিনি।
ক্লিনার সংকটে বর্জ্যে পরিণত হয়েছে সামেক হাসপাতাল। দুর্গন্ধে টিকতে পারেননা রোগী ও তাদের স্বজনরা। ৫০ জন সুইপার দরকার থাকলেও আছে মাত্র ২০ জন।

এ বিষয়ে সামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন রোগীর ভাই আবুল হোসেন জানান, পুরো হাসপাতালই যেন ময়লার ভাগাড়। মেডিসিন ওয়ার্ডের সামনে যে ফাঁকা জায়গা রয়েছে, সেই জায়গাটা ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ। বাতাসে যে দুর্গন্ধ আসে,তাতে সুস্থ রোগীও অসুস্থ হয়ে পড়বে। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে টেকা যায়না।
ওয়ার্ড বয় ও আয়া সংকটও প্রবল। ৫০ জন ওয়ার্ড বয় ও আয়ার বিপরীতে আছে মাত্র ১০ জন করে। ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসকদেরও অক্সিজেন সিলিন্ডার টেনে নিতে হয়।

সবচেয়ে বড় সংকটে রয়েছে প্যাথলজি বিভাগ। একজনও প্যাথলজিস্ট নেই সামেক হাসপাতালে। রক্ত সঞ্চালন বিভাগ না থাকায় ব্যাপক সংকটে পড়ছেন রোগীরা। চালু নেই রোগী কল্যাণ সমিতি।

সামেক হাসপাতালে আইসিইউ সংকটও প্রবল। ৮টি আইসিইউ বেড রয়েছে এখানে। সর্বদা ৪০/৫০ জন করে অপেক্ষায় থাকেন আইসিইউ বেডের জন্য। সংকট মেটাতে আরও ৮টি বেড দাবি সামেক কর্তৃপক্ষের।

এ বিষয়ে জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক আনিসুর রহিম জানান, করোনা কালিন সময়ে সামর্থের সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছে সামেক হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারিরা। তবে জনবল সংকটে যথাযথ চিকিৎসা দিতে পারছেনা তারা। জেলার একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে এ অবস্থা মেনে নেওয়া যায়না। তিনি সাতক্ষীরার মানুষকে বাচাতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, একবারে না হোক, ধীরে ধীরে জনবল ঘাটতি মেটানো হোক।

সার্বিক বিষয়ে সামেক হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খুদা বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। তবে জনবল সংকটে কিছুটা বাধাগ্রস্থ হচ্ছি। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এ সংকট কেটে যাবে।

(আরকে/এএস/আগস্ট ১৫, ২০২১)