মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : দীর্ঘ সৈকতে সর্বত্রই মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছুটে চলছে পর্যটকরা। বর্ষায় সাগরের উত্তাল ঢেউগুলো সৈকতে আছড়ে পড়ার সাথে সাথে তার সাথে আলীঙ্গনে মক্ত হয়ে পড়ছে দীর্ঘসময় পর সমুদ্র স্নানে নামা দর্শনার্থীরা। একটু পরপর পর্যটকবাহী সমুদ্র যানগুলো ছুটোছুটি করছে সমুদ্রের নীল জলে। প্রকৃতিতে হঠাৎ বেড়ে ওঠা বালুতটের সামুদ্রিক গুল্ম লতাগুলো পর্যটকদের পদছোঁয়ায় গুটিয়ে গেলেও চকচকে বালুতে ঘুরে বেড়ানো লাল কাঁকড়ারা লুকোচুরি করছে ঠিক আগের মতোই। দীর্ঘ সময় পর আজ বৃহস্পতিবার পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতে প্রান প্রকৃতির সাথে এমন উচ্ছাসই চোখে পড়ে পর্যটকদের। যাতে প্রান ফিরে পেয়েছে কুয়াকাটা সৈকত।

প্রাকৃতিক স্বর্গোদ্যাণ হিসেবে পরিচিত কুয়াকাটা সৈকত বিশ্বে পরিচিত সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের লীলভূমি হিসেবে। একই স্থানে সূর্যোদয়-সূর্যোস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ ছাড়াও কুয়াকাটার দীর্ঘ প্রায় ১৮ কিলোমিটার সৈকতে এখন শোভা পাচ্ছে সবুজ প্রকৃতি। সমুদ্রের সাদা ঝিুনুকের দল কার্পেটের মতো বিছিয়ে আছে সৈকত জুড়ে। লাল কাঁকড়ার অভয়ারণ্য সৃষ্টি হয়েছে লেম্বুরবন ও গঙ্গামতি সৈকতে। করোনার প্রভাবে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকদের ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এভাবেই সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। যা দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পর্যটকরা।

এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকদের ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় খুশি কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ছুৃটে আসছে কুয়াকাটায়। সৈকত লাগোয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেড়েছে বিক্রি। রেষ্টুরেন্টগুলো খুলে বসেছে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর। হোটেল-মোটেলগুলোতে পর্যটকরা বুকিং দিতে শুরু করেছে। একইভাবে কুয়াকাটার রাখাইন মার্কেট, বৌদ্ধ বিহার, রাখাইন পাড়া থেকে শুরু করে গঙ্গামতি সৈকত সর্বত্রই পর্যটকদের বিচরণ শুরু হওয়ায় খুশি এখানকার ব্যবসায়ী ও এলাবাসী। য়ে সৈকতের বালুমাখা পথ রাতের আধাঁরে চাদের আলোতে আলোকিত হতো এতোদিন, আজ থেকে সেখানে পর্যটকদের বিচরণ শুরু হবে।

কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসা ঢাকার পর্যটক আর্শ্বিয়া আহমেদ, সেজুতি নাহার ও তাইজুল হক বলেন, দীর্ঘ সময় ঢাকার দম বন্ধ করা পরিবেশে তারা হাপিয়ে উঠেছেন। তাই আজ সকালে কুয়াকাটা এসেছেন একটু প্রাকৃতিক বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিতে। এর আগেও কুয়াকাটায় তারা একাধিকবার এসেছেন, তবে এবার কুয়াকাটার প্রকৃতি তাদের মুগ্ধ করেছে। আর সাগরের ঢেউ থাকায় বিষয়টি তারা উপভোগ করছেন।

গত বৃহস্পতিবার সরকারি এক প্রজ্ঞাপনে আজ ১৯ শে আগস্ট থেকে পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিনিউটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র আসন সংখ্যা শতকরা ৫০ ভাগ ব্যবহার করে চালু করতে পারবে। সকল ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। এমন ঘোষণার পর থেকে আজকের দিনের অপেক্ষায় ছিলো কুয়াকাটার ব্যবসায়ী ও দর্শনার্থীরা।
হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আঃ মোতালেব শরীফ জানান, দীর্ঘ পাঁচ মাস পর্যটন স্পট বন্ধ থাকায় তারা অলস সময় কাটিয়েছেন। অনেক হোটেল-রেষ্টুরেন্টের কর্মীরা কর্মহীন থাকায় পেশা বদলে অন্য পেশায় ঝুঁকেছে। তবে আজ থেকে পর্যটনকেন্দ্র খোলায় তারা খুশি। এখন পর্যটকরা আসতে শুরু করেছে। কিছুদিনের মধ্যেই আবার নবউদ্যম শুরু হবে কুয়াকাটার ব্যবসা বানিজ্যে এমনটাই আশা করছেন।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, স্বাস্থ্য বিধি মেনে সরকার পর্যটন স্পট খুলে দিয়েছে। গত ১৭ আগষ্ট কুয়াকাটার ব্যবসায়ীদের নিয়ে এক বৈঠকে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীদের। তাই পর্যটন কেন্দ্র খুললেও যাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হয় এ বিষয়টি দেখবে প্রশাসন।

(এমকে/এসপি/আগস্ট ১৯, ২০২১)