মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উদ্যোগে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (২১ আগষ্ঠ) সকাল ১০টার দিকে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সম্মেলন কক্ষে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। দুই ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান সভাপতিত্ব করেন।

শুরুতে মৌলভীবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শহীদ হওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য শহীদদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করেন। এরপর স্বাগত বক্তব্যে মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মামলার বিবরণ ও বিভিন্ন থানার মূলতবী পরোয়ানার বিবরণ তুলে ধরেন এবং জেলার বিভিন্ন থানায় তদন্তাধীন থাকা মামলার তদন্ত কার্য দ্রুততা ও দক্ষতার সাথে আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ, যথা সময়ে মামলার সাক্ষী উপস্থাপন নিশ্চিত করে তাদের নিরাপত্তা বিধান, গ্রেফতারের পর আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে সোপর্দ করার,পরোয়ানা জারির ক্ষেত্রে আরও তৎপর হওয়ার এবং মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন মামলাসমূহের সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য বিচারক ও থানার অফিসার ইনচার্জসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা দেন।

কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন,অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বেগম রুমানা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান মোঃ নাছের রিকাবদার, র‌্যাব-৯, শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার বাসুদেব চাকমা, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক, পাবলিক প্রসিকিউটর, মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও)সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি হিসেবে সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা,বন বিভাগ, সিলেট-এর প্রতিনিধি, জেল সুপারের প্রতিনিধি, প্রবেশন কর্মকর্তা,পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক, জেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (ওজঝঙচ)কোর্ট ইন্সপেক্টর,ইন্সপেক্টর,সিআইডি, পিবিআই, ট্র্যাফিক ইন্সপেক্টরসহ জেলার বিভিন্ন থানা ও গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জগণ।

কনফারেন্সে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ইন্সপেক্টর ও থানার অফিসার ইনচার্জগণ মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালসহ জেলার অন্যান্য হাসপাতাল থেকে যথাসময়ে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট ও মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হতে যথাসময়ে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট ও মেডিকেল সার্টিফিকেট এবং ডিএনএ ফরেসিক ল্যাব হতে যথাসময়ে ডিএনএ প্রতিবেদন না পাওয়ায় অনেক মামলায় আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুলিশ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা সম্ভব হয় না মর্মে উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বেগম রুমানা ইয়াসমিন তার বক্তব্যে বলেন,সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হতে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট ও মেডিকেল সার্টিফিকেট যতদ্রুত সম্ভব প্রাপ্তির এবং আদালতে আগত সাক্ষীদের ভাতা প্রদানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান মোঃ নাছের রিকাবদার তার বক্তব্যে বলেন,মাদকের মামলায় আইনানুযায়ী জব্দ তালিকা প্রস্তুত করার ও দ্রুততার সাথে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রেরণের,তদন্তকালে সতর্কতার সাথে সাক্ষীদের বিবৃতি লিপিবদ্ধ করার এবং মামলা দায়ের পরবর্তী দ্রুততার সাথে জব্দ তালিকা আদালতে প্রেরণের বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান পুলিশ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার আলোকে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট ও মেডিকেল সার্টিফিকেটের কলাম পরিষ্কার, স্পষ্টাক্ষরে পূরণ ও একই ধরনের টাইপ কপিসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রেরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধিগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এছাড়াও, বক্তাগণ দ্রুত গ্রেফতারী পরোয়ানা, হুলিয়া, ক্রোকী পরোয়ানা তামিল ও সমন জারির ব্যবস্থা গ্রহণ, তদন্ত কার্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান, তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার, হয়রানী বন্ধ, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট ও মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদানের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন, নকলখানা হতে স্বল্পতম সময়ে নকল সরবরাহের ব্যবস্থা করা, মামলার আলামত সংরক্ষণ ও সঠিক নিয়মে নিষ্পত্তি, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও নিষ্পত্তিকৃত নথি দ্রুত রেকর্ডরুমে প্রেরণ, আদালত ও বিচার সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ নানাবিধ বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামতসমূহ কনফারেন্সে তুলে ধরেন।

কনফারেন্সের শেষ দিকে বিভিন্ন থানা থেকে আগত অফিসার ইনচার্জসহ অন্যান্য উপস্থিত কর্র্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যার আইনি সমাধান,প্রশ্নোত্তর প্রদান এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করে সমাপনী বক্তব্যে দেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান। সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন,ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় বিচার প্রশাসন,নির্বাহী প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ একে অপরের পরিপূরক। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে একযোগে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে বিচার প্রার্থী মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কারও অবহেলা কাম্য নয়। সামনের দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর পারষ্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আসবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

(একে/এসপি/আগস্ট ২১, ২০২১)