মিলাদ হোসেন অপু, ভৈরব  (কিশোরগঞ্জ) : ভৈরবে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি আলহাজ্ব জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী ও ভৈরব-কুলিয়ারচর আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নাজমুল হাসান পাপন এর মাতা শহীদ আইভি রহমানের ১৭তম শাহাদাতবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করা হয়। সকাল ৮টায় ভৈরব আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে কোরআন তেলাওয়াত, সকাল ৯টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ট্রমা হাসপাতাল সংলগ্ন আইভি রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, বেলা ১১টায় ভৈরব সরকারি কে.বি. পাইলট মডেল হাই স্কুল মাঠে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল, বেলা ১টায় আলোচনা সভা শেষে আইভি রহমান স্মরণে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও ৫ হাজার হতদরিদ্র্যদের তাবারক বিতরণ করা হয়। এছাড়াও হতদরিদ্র ৩৬ পরিবারের মাঝে সেলাই মেশিন ও ছাগল বিতরণ করা হয়। দুপুর ২টায় চন্ডিবের শহীদ আইভি রহমানের নিজ পিত্রালয়ে মিলাদ মাহফিল, কাঙ্গালিভোজের আয়োজন করা হয়েছে। একই সময় ভৈরব থানা চত্বরে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বিকালে পৌর শহরের ভৈরবপুর উত্তরপাড়া আইভি ভবনে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

সকাল ৯টায় আইভি রহমান প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ, ভৈরব থানা পুলিশ প্রশাসন, পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, বিভিন্ন কলেজ শাখার ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

বেলা ১১টায় উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে মহীয়সী নারী নেত্রী শহীদ আইভি রহমানের স্মরণে আলোচনা ও মিলাদ মাহফিলে ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো.সায়দুল্লাহ মিয়ার সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ভৈরব পৌর মেয়র আলহাজ্ব ইফতেখার হোসেন বেনু, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সেন্টু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর, উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি অধ্যাক শামসুজ্জামান বাচ্চু, জাকির হোসেন কাজল, অহিদ মোল্লা, হাজী সেলিম খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক জাহাঙ্গীর, খলিলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শেফাত উল্লাহ, আবু বকর সিদ্দিক, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি আলহাজ্ব জিল্লুর রহমানের একান্ত সচিব সাখাওয়াত উল্লাহ, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি এসএম বাকী বিল্লাহ, সহ-সভপতি মো. দ্বীন ইসলাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আব্দুল হেকিম রায়হান, সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন জামাল, উপজেলা যুবলীগ আহ্বায়ক অরুণ আল আজাদ, আরমান উল্লাহ, পৌর যুবলীগ সভাপতি ইমরান হোসেন ইমন প্রমুখ। এছাড়া আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে সেই তৎকালীন বিএনপি, জামায়াত জোট সরকারের মদদে সেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় নিহত নারী নেত্রী শহীদ আইভি রহমানসহ ২২ জনকে হত্যা করা তাদের উদ্দেশ্যে ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এ দেশ থেকে চিরতরে আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলা। সেই গ্রেনেড হামলাটি ছিল সেই ১৫ আগস্টের ছক। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২০০৪ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করে এ দেশের মাটি থেকে আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলতে এ হামলা চালিয়েছিল। এই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় ২১ আগস্ট আহত হয়ে ২৪ আগস্ট জীবন দিতে হয়েছে আমাদের ভৈরবের গর্বের ধন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানকে। শহীদ আইভি রহমান আপাত মস্তক মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।

তিনি শিখিয়ে গেছেন মানুষকে কিভাবে সেবা দিতে হয়। যে মানুষটি নিজেকে গুচিয়ে জীবন যাপন করতেন সেই মানুষটি বন্যায় কবলিত মানুষের পাশে অগোচালো ভাবে মানুষের সেবা দিয়ে গেছেন। পানিতে ভিজে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে সাহায্য সহযোগিতা পৌঁছে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় যে কোন সভায় তিনি স্টেজে না বসে কর্মীদের নিয়ে সামনের সারিতে মাটিতে বসতেন। সেদিন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট একইভাবে তিনি সামনের সারিতে বসে ছিলেন। সেই ঘাতকদের গ্রেনেড হামলায় তিনি আহত হয়ে ৩ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ২৪ আগস্ট মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এই হত্যার বিচারের দাবিতে ভৈরবের মানুষ প্রয়োজনে আবার আন্দোলনে যাবে। এ মামলার যে রায় হয়েছে সে রায় বহাল রেখে দ্রুত বিচার কার্য সম্পন্ন করা হয় সে আহ্বান করেন বক্তারা। এছাড়াও বক্তারা শহীদ আইভি রহমানকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি জাতীয় স্থাপনার নামকরণের আহ্বান জানান।

(এম/এসপি/আগস্ট ২৪, ২০২১)