এমদাদুল হক স্বপন, ঝালকাঠি : ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালী নদীতে আকস্মিক ভাঙন শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা ব্যায়ে সদর উপজেলার পশ্চিম দেউরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারের একাংশ নদী ভাঙ্গনে ধ্বসে পড়েছে। এসময় পার্শ্ববর্তী একটি পাকা মসজিদসহ তীরবর্তী এলাকাও বিলীন হয়ে যায়।

প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানায় স্থানীয় কৃষক আঃ বারেকের পুত্র নেয়ামত উল্লাহ (১৬) ভবনের নীচে চাপা পড়ে নিখোঁজ ও মেহেদী হাসান সহ কয়েকজন আহত হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন। ভাঙ্গন ঠেকাতে প্রায় ৬ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের জন্য প্রস্তুত করার কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বিভাগ।

পশ্চিম দেউরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক খান জানান, সকাল ১০ টার দিকে সাইক্লোন সেল্টার কাম বিদ্যালয় ভবনের পশ্চিম অংশের মাটি কিছুটা দেবে যায়। তাই দ্রুত আমরা শিক্ষকরা কজন ছাত্র নিয়ে স্কুলের মালমাল অন্যত্র সরিয়ে নিতে থাকি। দুপুর সাড়ে ১২ টায় হঠাৎ বিকট শব্দে ভবনের অর্ধেকের বেশী অংশ ভেঙে নদীর পানিতে তলিয়ে যায়।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী কৃষক খাইরুল জানায়, পাকা ভবনটি যখন দেবে যাচ্ছিল তখন আমার আত্মীয় নেয়ামতুল্লাহ মোবাইল দিয়ে দৃশ্যটি ভিডিও করছিলো। হঠাৎ করে বিকট শব্দে ভবনের বড় অংশ ভেঙ্গে পরে। তখন আমরা দৌড়ে সরে আসতে পাড়লেও নেয়ামতউল্লাহ বিল্ডিংয়ের নীচে চাপা পরে তলিয়ে যায়।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অফিসার আবুল হোসেন বলেন, আমরা একটি ইউনিট নিয়ে ঘটনা স্থলে এসে দেখি সাইক্লোন সেল্টারের পশ্চিম অংশ সম্পূর্ন পানীর নিচে। যা আমাদের পক্ষে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। তাই বিষয়টি তাৎক্ষণিক ভাবে বরিশাল নৌ ফায়ার স্টেশনকে অবগত করেছি। তারা নিখোঁজ নেয়ামতকে উদ্ধারের জন্য ডুবুরী নিয়ে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্য রওনা হয়েছে।

ইতিপূর্বে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও ফণীর প্রভাবে বৃদ্ধি পাওয়া পানির তোড়ে এই সাইক্লোন সেল্টারের একটি পানির ট্যাঙ্কি ও গভীর নলকূপ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এমন কি ভবনটির বেজমেন্টের নিচ দিয়ে মাটি সরে গিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এরপর থেকে সংস্কারের উদ্দ্যোগ না নেয়ায় ভবনটির অর্ধেক সুগন্ধা-বিষখালীর মোহনায় ডুবে গেছে এবং বাকী অংশ যে কোন মুহূর্তে নদীতে চলে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, ইমারজেন্সি সাইক্লোন রিকভারি এন্ড রিস্টোরেশন প্রজেক্টের আওতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এলজিইডি এই সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করে। এ সময় সুগন্ধা-বিষখালী নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকার ১০০ গজের মধ্যে এ ধরনের ভবন নির্মাণে স্থানীয়রা জোড় আপত্তি জানিয়ে ছিল। এনিয়ে তখন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলে ছিল ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী শাসনের ব্যবস্থা করবে’। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এ ধরনের কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় বর্তমানে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি ধ্বসে পরছে।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন জানান, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখেছি সাইক্লোন শেল্টারের ছাদের অংশ নদী ভাঙ্গনে ধ্বসে পড়েছে। ভবনের বাকি অংশ পুরোটাই কাত হয়ে আছে। যে কোন সময় এটি ধ্বসে পরতে পারে। এখানে ভাঙ্গন রোধে প্রায় ৬ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করেছি। পাশাপাশি এ কাজ করার জন্য অনুমোদন চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। অনুমোদন পাবার সাথে সাথে ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করা হবে।

(এস/এসপি/আগস্ট ২৪, ২০২১)