শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরে ফিল্মী স্টাইলে মা ও ছেলেকে অপহরনের পর ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী ঘটনায় আটক সিআইডি পুলিশের এএসপি সারোয়ার কবীর, এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনেস্টবল আহসান উল ফারুক, ফসিউল আলম পলাশ ও হাবিব মিয়াকে আটক জেল-হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রচন্ড বৃষ্টিতে উপেক্ষা করে আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় পুলিশের দু’টি পিকআপ ভ্যানের মাঠে কালো গ্লাসের সাদা মাইক্রোবাসে করে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আটক সিআইডি পুলিশের এএসপি সারোয়ার কবীর সহ ৫ জনকে দিনাজপুর চীফ জুটিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নেয়া হয়। অতিরিক্ত চীফ জুটিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বিশ্বনাথ মন্ডল তাদের জেল-হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

ঘটনার শিকার স্বজন ও প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট রাত আনুমানিক ৯টায় চিরিরবন্দর উপজেলার নান্দেরাই গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে মা জহুরা বেগম (৪৬)ও ছেলে জাহাঙ্গীর (২৫)কে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে ফিল্মি স্টাইলে মাইক্রোযোগে অপহরন করা হয়। এ সময় মা ও ছেলেকে মারপিটও করে অপহরনকরীরা। জহুরা বেগমের বাড়ির লোকজন র‌্যার,ডিবি পুলিশসহ বিভিন্ন জায়গায় আটকের বিষয়ে খোঁজ নেয়। কিন্তু কেউ আটকের বিষয়ে কিছু বলতে পারেনা। পরে অপহরনকারীরা মোবাইলে জহুরা বেগম এর স্বামী লুৎফর রমান ও দেবর রমজানের কাছে প্রথমে ৫০ লাখ এবং পরে ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবি করে।

মঙ্গলবার হাজি দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে স্ত্রী ও সন্তানকে উদ্ধারে মুক্তিপনের টাকা দিতে যায় স্বামী লুৎফর রহমান ও দেবর রমজান আলী। তদের সাথে সিভিল পোশাকে পুলিশ রয়েছে টের পেয়ে অপহরনকারীরা সাথে থাকা মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ১০ মাইল নামক স্থানে পুলিশ তাদের ধরে ফেলে। অভিযানে জেলা পুলিশ ও চিরির বন্দও থানার পুলিশ অংশ নেয়।

আটকের পর পুলিশ জানতে পারে অপহরনকারীদের মধ্যে রংপুর সি আইডি জোেেনর সিআইডি পুলিশের এএসপি সারোয়ার কবীর, এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনেস্টবল আহসান উল ফারুক, ফসিউল আলম পলাশ ও হাবিব মিয়া রয়েছে।

বুধবার অপহত মা জহুরা বেগম ও ছেলে জাহাঙ্গীরকেও ডিবি অফিসে জিজ্ঞাবাদের জন্য আনা হয়।

দিনাজপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন পিপিএম এবং বিপিএম (বার) এ বিষয়ে সাংবাদিকের কাছে মুখ খোলেননি। এমনতি তিনি মুঠোফোনও ধরেননি গণমাধ্যমে কর্মরত কারোই।

তবে, প্রচন্ড বৃষ্টিতে উপেক্ষা করে আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় দিনাজপুর পুলিশ সুপরের কার্যালয় হতে পুলিশের দু’টি পিকআপ ভ্যানের মাঠে কালো গ্লাসের সাদা মাইক্রোবাসে করে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আটক সিআইডি পুলিশের এএসপি সারোয়ার কবীর সহ ৫ জনকে দিনাজপুর চীফ জুটিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নেয়া হয়। বিচারক তাদের জেল-হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে রংপুর সিআইডির পুলিশ সুপার আতাউর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা কোন প্রকার অনুমতি না নিয়ে সেখানে (চিরিরবন্দর) গেছে। তাদের আটকের বিষয়টি শুনেছি। তারা কেন সেখানে গেছে, কাকে অপহরণ করেছে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় খোঁজখবর নিয়ে তদন্ত স্বাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিআইডির কাছে পলাশ নামে এক ব্যাক্তি চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের গাদুশা পাড়ার জনৈক চ্যালেঞ্জ মৌলানার ছেলে লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার প্রতারণার অভিযোগ আনে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৩ আগস্ট সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৯ টায় সিআইডির সহকারি পুলিশ সুপার মোঃ সারোয়ার কবির সোহাগ, এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনষ্টেবল আহসান উল ফারুক, ফসিউল আলম পলাশ ও হাবিব মিয়া উক্ত লুৎফরের বাড়িতে যায়। তাকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও ছেলেকে কালো মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায়।

(এস/এসপি/আগস্ট ২৫, ২০২১)