কুমিল্লা উত্তর প্রতিনিধি : শাহিদা আক্তার দাউদকান্দি উপজেলার মালিগাও ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহলিা সদস্য। গ্রামের গরীব মহিলাদের সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য গত ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত হওয়ার প্রথম সভায় সকল সদস্যদের সাথে একবার স্বাক্ষর দিয়েছেন। এখন লাখ লাখ টাকার প্রকল্পের মধ্যে আমার ও অন্যান্য ইউপি সদস্যদের জাল স্বাক্ষর দিয়ে অর্ধকোটি তুলে নিয়েছে মালিগাও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেফজাতে ইসলামের নেতা ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শাহজালাল সরকার।

অপর মহিলা সদস্য পারুল আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়নের নির্যাতিত মহিলাদের কোন বিষয় নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান নিকট গেলে তিনি বলেন, স্বামী অনুমতি ছাড়া মহিলাদের যে কোন বিষয়ে ঘরে বাহিরে আইসা সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা ঠিক না। মহিলা পর্দার মধ্যে থাকা ভাল। পুরুষের কাজ নিয়ে মহিলাদের এত ভারাভারি করা ঠিক না। মহিলা সদস্য হাজেরা বেগম দুস্ত ,গরীব ও বিধাব নারীদের সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য মহিলারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচিত করেছেন। মহিলাদের বিভিন্ ভাতা ও স্বামী নির্যাতিত মহিলাদের নিয়ে কয়েকবার চেয়ারম্যানের কাছে ধর্না দিয়েছি। তিনি বলেছেন, এ সরকারের আমললে এসব ভাতা কোন কিছুই দেয় না। বিএনপি সরকার আসলে সব কিছুই দিবু। এসব কথা বলে তিন বছর পার করে দিলাম এলাকার উন্নয়ন বলতে কিছুই করতে পারি নাই। শুধু উন্নয়ন হয়েছে চেয়ারম্যানের ভাংঙ্গা টিনের ঘর থেকে দুতালা দালানের নির্মাণের। আমরা ৩মহিলা সদস্য আমাদের নির্বাচিত প্রতিশ্রুকি বলতে অসহায় মহিলা সহযোগিতা করতে পারলাম না। এমনি ভাবে পরিষদের আট সদস্য চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুখের কথা জানালেন ।

সোমবার সরেজমিনে এলাকার জনগণ ও ইউনিয়ন পরিষদের ১২ সদস্যের মধ্যে ৮জনই অভিযোগ করে বলেন, ২০১১-১২অর্থ বছরে ভূমি অফিস থেকে বরাদ্ধ ১% টাকা ১২লাখ এবং ২০১২-১৩ইং অর্থ বছরে ১৮লাখ ৫০হাজার এবং এলজিএসপির বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্ধকৃত ভুয়া প্রজেক্ট দেখিয়ে প্রায় ২০লাখ মোট অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ই্উনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরৎ পেতে মালিগাও ইউনিয়ন পরিষদের ৩মহিলা ও ৫ পুরুষ সদস্য স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ কুমিল্লা জেলা প্রশাসক বরাবর ডিসেম্বর মাসে দরখাস্ত করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক সাঈদ মাহবুব খান স্বাক্ষরিত গত ২৩ ফেব্রয়ায়ারি দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর এক চিঠিতে নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন অভিযোগ গুলো সরেজমিনে দুই দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করার জন্য।

এ ব্যাপারে অভিযোগকারীদের মধ্যে ইউপি সদস্যদের মধ্যে মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, অবিযোগ তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকার বিভাগ শাখা গত ২৩ ফেব্রয়ায়ারী দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর এক চিঠি প্রেরণ করেন। যাতে নির্দেশ রয়েছে চিঠি পাওয়ার দুই কার্র্য দিবসের মধ্যে অভিযোগটি সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত কওে প্রতিবেদন কুমিল্লায় পাঠাতে। আমরা জানিনা ২ দিনের মধ্যে ১০দিন পার হওয়ার পরও কোন অদৃশ্য শক্তির বলে গতকাল রোববার উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিএ আলমগীরের নিকট টিঠি বিষয় জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোন কিছু বলতে অপরগতা প্রকাশ করেন। পরে আমরা কুমিল্লা জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকার শাখা থেকে পত্রটির একটি কপি সংগ্রহ করি। আজ সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে চিঠির বিষয়টি সাংবাদিদের নিকট তুলে ধরি। মালিগাও ইউনিয়ের চেয়ারম্যান মো. শাহজালাল মোট ২৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা অত্মসাৎ করেছে। আমাদের ৮জন সদস্যদেরকে প্রকল্পের সভাপতি করে তাদের স্বাক্ষর জাল করে ওই অর্থ আত্মসাৎ করেন।

এব্যাপারে অভিযুক্ত মালিগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো শাহজালালের সাথে তার মুটো ফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, প্রকল্পের সভাপতি মহিলা সদস্য ও পুরুষ সদস্যদের স্বাক্ষরে প্রকল্পের টাকা তোলা হয়েছে। যে সব সদস্য প্রকল্প থেকে সুবিদা পায়নি তারাই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।

দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান জানান, উপজেলার মালিগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য জেলা প্রশাসাকের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পত্র পাওয়া গেছে। আমি ছুটিতে আছি। ছুটি থেকে কর্মস্থলে ফিরে আসলে বিষয়টি তদন্ত করা হবে।

(ওএফএম/এএস/মার্চ ০৩, ২০১৪)