চৌধুরী আবদুল হান্নান


পেশা জীবনের কিছু ঘটনা বলতে গেলে, নিজেকে জাহির করার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কিন্ত কিছু কিছু ঘটনা যা সর্বজনিন শিক্ষণীয় তা প্রকাশ করা নিশ্চয়ই দোষের নয় । জেলা পর্যায়ের একটি ব্যস্ততম বড় শাখায় ব্যবস্হাপকের দায়িত্ব পালনকালে অনেকটা অসহায়ের মতো লক্ষ্য করলাম ব্যাংকের দায়ের করা মামলা আর নিষ্পত্তি হয় না, মামলার পর মামলা, মামলার স্তুপ জমে যায়। অবশ্য ব্যাংকারদের একটি মানসিকতা রয়েছে, যেহেতু মামলা হয়েছে, সে টাকা আদায়ের তৎপরতা এখন আর ব্যাংকের স্বাভাবিক কাজের মধ্যে নয়, যা করার ব্যাংক-নিযুক্ত উকিল সাহেব করবেন। 

কৌতূহল আর আগ্রহ নিয়ে মামলা চলাকালে জেলার সাব-জজ আদালতে উপস্হিত হলাম, কোর্ট রুম— জজ সাহেবের আসন, উকিল-মোক্তার সেরেস্তাদারসহ আদালতের কর্তাব্যক্তিদের উপস্হিতিতে রুমটি সরব। মামলা-সংশ্লিষ্ট উকিল সাহেবরা বসে আছেন, আমি ব্যাংকের উকিলের পাশে চুপ করে বসে আছি। বিজ্ঞ বিচারক যথাসময়ে এসে তাঁর আসনে উপবিষ্ট হলেন, একটির পর একটি মামলা উঠতে থাকে, বেলা গড়িয়ে যায় কিন্ত ব্যাংকের মামলা আর উঠে না।তবে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সব শেষে ব্যংকের মামলা উঠবে আর বিবাদীর উকিল সময় নিয়ে নেবে এভাবেই চলে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। অবশেষে ব্যাংকের মামলা উঠলো, আমি দাঁড়িয়ে পরিচয় দিয়ে বললাম—স্যার, আমি কিছু বলতে চাই।সাথে সাথে বিবাদীর আইনজীবীসহ কোর্টে উপস্হিত প্রায় সকল আইনজীবী এক সুরে কথা বলতে শুরু করলো—ওনার তো বিজ্ঞ আইনজীবী রয়েছেন কথা বলার জন্য, সেখানে ম্যানেজার সাহেবের কথা বলার দরকার কি ? মাননীয় বিচারক একবার আমার দিকে তারপর প্রতিবাদকারী দিকে, পুনরায় আমার দিকে তাকিয়ে বললেন—“, সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার সাহেব, আপনি বলুন।” পরিবেশ তাৎক্ষণিক শান্ত। আমি বললাম— স্যার, এ মামলাটি দীর্ঘদিন চলমান আছে, একই কারণ দেখিয়ে তিনি বার বার সময় নিচ্ছেন, আমরা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চাই। আর প্রতি তারিখে, মামলার প্রতি শুনানীতে আমাদের উকিল সাহেবকে ফি দিতে হয়। এবার জজ সাহেব বিবাদীর উদ্দেশ্যে : আপনি অনেক সময় নিয়েছেন, আর সময় দেয়া যাবে না, ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করেন না কেন? বিবাদী আর তার উকিলের দীর্ঘ বয়ান শুনার পর বিজ্ঞ জজ অর্ডার দিলেন : সময় দেয়া হলো ৭ দিন, তবে আগামী দিন শুনানী শুরুর আগে ব্যাংকের উকিলের ফি বিবাদী কর্তৃক জমা দিতে হবে। ব্যাংকের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নতুন দুয়ার খুলে গেল, তবে থাকতে হবে চ্যালেন্জ নেয়ার সাহস ও ইচ্ছা। ইতিপূর্বে ২/৩ মাস পর পর মামলার তারিখ পড়তো, ব্যাংকের আইনজীবীকে আপত্তি দিতেও দেখা যায় না, বরং অনেক সময় বিবাদীর থেকে সুবিধা নেয়ার কথাও শুনা যায়। তবে ব্যাংকের সব আইনজীবী বিবাদীর সাথে আঁতাত করেন, তা নয়। রক্ষক যখন ভক্ষক হয় আর ইঁদুর যখন বিড়ালের বন্ধু হয়, তখন বুঝতে হবে সর্বনাশটা কাছাকাছি আছে !

লেখক : সাবেক ব্যাংকার ।