প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : তিস্তা নদীতে সরকারের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই তীব্র ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে কয়েকশত পরিবারের মানুষ। গত ৩মাস ধরে অব্যাহত তীব্র নদী ভাঙনে কুড়িগ্রামের রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াশাম, চরগতিয়াশাম ও বগুড়াপাড়া গ্রামে সহস্রাধিক সহ দুই ইউনিয়নের ১০ গ্রামে সহস্রাধিক পরিবারের মানুষ বাস্তুভিটা হারিয়েছেন। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) ওই ভাঙন কবলিত এলাকায় দায়সাড়া কাজ করায় এলাকাবাসীরা পাউবোর কর্মকর্তাদের মারধরের হুমকী দেয়ায় অভিযোগ এনে ভাঙন প্রতিরোধে গতিয়াশাম এলাকায় কাজ বন্ধ রেখেছে পাউবো কর্তৃপক্ষ। 

বুধবার (১ সেপ্টেম্বর)সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার নদী ভাঙন প্রবন এলাকা ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ, বুড়িরহাট, গতিয়াশাম, চরগতিয়াশাম, শরিষাবাড়ি বগুড়াপাড়া এবং বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি, কালির মেলা, চতুরা, গাবুর হেলান, রতি, তৈয়বখাঁ, চর বিদানন্দ সহ ১০টি গ্রামের বিভিন্ন স্থানে সহ¯্রাধিক মানুষ বাস্তুভিটা হারিয়েছেন। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে গতিয়াশাম, চরগতিয়াশাম ও বগুড়াপাড়া গ্রামে নদী গর্ভে ৫শতাধিক মানুষের বসত ভিটা, দুই শতাধিক একর ফসলী জমি, আড়াই কিলোমিটার রাস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অব্যাহত ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে নদী পাড়ের মানুষজন। তারা নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছেন।

এছাড়া তীব্র ভাঙনের কারনে হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে তৈয়বখাঁ বাজার, কালিরহাট বাজার, বুড়িরহাট বাজার, তৈয়বখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২০টি প্রতিষ্ঠান ও ফসলী জমি। দিনের পর দিন ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে জনশুন্য দু’টি ইউনিয়নের মানচিত্র । বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা এলাকার হরিপদ, বাসন্তি, আঃ সালাম, আলফাজ উদ্দিনসহ অনেকে বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা না হলে যেকোন মহুর্তে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে এসব প্রতিষ্ঠান। ভাঙন আতঙ্কে অনেকে গ্রাম ছেড়েও চলে যাচ্ছেন অন্যত্র।

এদিকে ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো খোলা আকাশের নীচে মানবেতর দিনাতিপাত করলেও এখন পর্যন্ত তারা স্থায়ী বসবাসের জন্য সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন সাহায্য-সহযোগীতা পাননি। চরগতিয়াশাম বগুড়াপাড়া গ্রামে দেখা যায়, ওই গ্রামের মানিক মিয়া (৬৫) এর আধাপাকা বিল্ডিং বাড়িটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মানিক মিয়া বলেন, গত ২০/২৫দিনে পনের-ষোল দোণ মাটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। মনে করছিলাম সরকার নদী ভাঙনে বিশাল পদক্ষেপ নিয়েছে। নদী আর এদিকে আসবে না। তাই কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে বাড়ি করছিলাম, তাও চলে গেল। আমাদের আর কোথাও যাওয়ার পথ নেই।

ওই এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন যুবক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী থেকে বালু তুলে ভর্তি করে কোন রকমে কাজ করে প্রজেক্ট দেখে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। মানসম্মত কাজ করলে এতো মানুষ আজ ভিটে মাটি হারা হতো না। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের হুমকীর বিষয়টি ভিত্তিহীন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে তাসনিম জানান,ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ১লক্ষ টাকা ও ১মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ পেয়েছি, তালিকা হচ্ছে, দু-একদিনের মধ্যে দেয়া হবে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বলেন, গতিয়াশাম, চরগতিয়াশাম গ্রামে গত জুলাই মাসে টানা ৫দিন ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করার পর ওই এলাকার লোকজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকদের বেঁধে মারধরের হুমকী দেয়ায় পড়ে কাজ বন্ধ রয়েছে।

(পিএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ০১, ২০২১)