শিমুল সাহা, লক্ষ্মীপুর : তিন আনা স্বর্ণের কানের দুলের লোভেই শিশু পপি সাহাকে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে হত্যা মামলার প্রধান আসামী রুমা বেগম।

শুক্রবার (৩ সেপ্টম্বর) বিকেলে গ্রেফতারকৃত আসামী রুমা ও তার স্বামী এমরানকে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত-২ রায়পুরে হাজির করা হলে এ জবানবন্দি দেয় সে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহনের পর তাদের দু’জনকেই জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন অত্র আদালতের বিচারক মো. তারেক আজিজ। শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রায়পুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল জলিল।

স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দির বিষয় উল্লেখ করে ওসি আবদুল জলিল বলেন, ৭ বছর বয়সী শিশু পপি সাহাকে প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া রুমা বেগম সকলের অগোচরে কৌশলে নিজের ঘরে নিয়ে প্রথমে বিস্কুট খেতে দেয়। এসময় শিশুটির কানে তিন আনা ওজনের স্বর্ণের দুল দেখে লোভ সামলাতে না পেরে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে চৌকির নিচে ফেলে রাখে রুমা বেগম। গভীর রাত নামলে লাশ সরিয়ে ফেলার উদ্দেশ্য ছিলো তার।

ওসি আরো বলেন, মামলার অপর আসামী রুমার স্বামী এমরান হত্যাকান্ডের বিষয়ে এখন পর্যন্ত মুখ না খোলায় ৫ দিনের রিমান্ড আবেদনও করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রায়পুর থানার উপ-পরির্দশক জাহাঙ্গির আলম।

প্রসঙ্গত, নিহত শিশু পপি সাহা লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের সাগরদী গ্রামের মানিক সাহার বাড়ির সৌদি প্রবাসী নির্মল সাহা ও ববিতা সাহার বড় মেয়ে। সে সাগরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালের প্রথম শ্রেনীর ছাত্রী। গতকাল বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে শিশু পপিকে বাড়িতে রেখে আইসক্রিম কিনতে বাজারে যান মা ববিতা। বাজার থেকে আসার পথে বাড়ির পাশে পপিকে দেখতে পেয়ে আইসক্রিম খেতে আসতে বলে তিনি। এরপর বেলা ১১টা থেকে নিখোঁজ হয় ৭ বছর বয়সী শিশু পপি সাহা। দিনভর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও শিশুটির সন্ধান পায়নি স্বজনরা। পরে বিকেলে প্রতিবেশি আবুল কাশেমের বাড়ির ভাড়াটিয়া রুমা বেগমের ঘরে তালা বন্ধ অবস্থায় দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। এক পর্যায়ে তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করতেই চৌকির নিচে দেয়ালে হেলান দেয়া অবস্থায় শিশু পপির লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় তারা।

পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই ঘর থেকে লাশটি উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এসময় পালিয়ে যেতে চাইলে স্থানীয়দের সহযোগীতায় অভিযুক্ত রুমা ও তার স্বামী এমরানকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এঘটনায় রাতেই নিহত পপির মা ববিতা সাহা বাদী হয়ে তাদের দু’জনকে আসামী করে রায়পুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের শুক্রবার বিকেলে আদালতে হাজির করা হলে আসামী রুমা বেগম হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২১)