রহিম আব্দুর রহিম


করোনা ইস্যুতে গত বছর ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭মার্চ থেকে দেশের সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।যে বন্ধ দুয়ারে ২৩ দফায় তালা ঝুলছে টানা একবছর পাঁচ মাস ২৬দিন। দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষা স্তর ও বয়সের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীরা শারীরিক, মানসিক এবং প্রকৃতি ও পু্ঁথিগত শিক্ষা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হয়েছে, যা শিক্ষাক্ষেত্রে অপূরনীয়।বিষয়টি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষন- বিশ্লেষণ করেছন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।ফলে তিনি দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রয়োজনী নির্দেশনা দেন সংশ্লিষ্টদের। নির্দেশনা পেয়ে শিক্ষামন্ত্রী ৫সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সশরীরে  ক্লাসে বসানো হবে শিক্ষার্থীদের। প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আপনজনে পরিনত হয়েছেন। অভিভাবক মহলেও প্রশংসা চলছে।শিক্ষকদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুর জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে ১৯নির্দেশনা পাঠিয়েছে দেশের সকল পর্যারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। যা অত্যন্ত গবেষণালব্দ। যার সারসংক্ষেপ , " আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে, শিক্ষা সংশ্লিটরা স্বাস্থবিধি মেনে চলবেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজ দায়িত্বে চলা-ফেরায়,প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়ায় এবং ক্লাসে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করবেন। প্রতিষ্ঠান আঙ্গিনা, শ্রেণিকক্ষ সর্বদায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন। শিক্ষার্থীরা অর্ধদিবসের ক্লাস করবে, পাশাপাশি খেলাধুলা করবে সমানতালে।" ক্লাসে যারা প্রতিদিন বসবে তারা হলো, প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণি প্রতিদিন, অন্যানরা সপ্তাহে একদিন। মাধ্যমিকে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা প্রতিদিন, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বসবে সপ্তাহে একদিন, উচ্চ মাধ্যমিকে এইচ এস এস সি প্রতিদিন, অন্যানরা সপ্তাহে একদিন। বিষয়টি শহর অঞ্চলের জন্য যৌক্তিক এবং বিজ্ঞান সম্মত।

তবে মফস্বলের জন্য ততোটা নয়। কারণ, যাদের ক্লাসে বসানো হচ্ছে,তারা করোনাকালের দীর্ঘ ছুটিতে কেউ ঘরে থাকে নি; যে যেভাবেই হোক না কেনো, তারা ঘরের বাইরে, নদীর ধারে,ঝোঁপ-ঝাড়ে সময় কাটিয়েছে। ওরা শুধু প্রত্যক্ষ পাঠ্যসূচি থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং কিছু অংশ বিপদগামীও হয়েছে বটে।কিন্তু শিশুরা অর্থাৎ প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির মফস্বল শিক্ষার্থীরা বাড়ন্ত কালের প্রকৃতিগত সকল প্রকার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী লেখা পড়ার ইতি টেনে কর্মে লিপ্ত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের প্রায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিয়ে হয়ে গেছে। দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার ছুটি চলায় শিক্ষাক্রম এবং শিক্ষাকর্মীদের মাঝে কর্মে ছন্দপতনই নয়, একেবারে ছন্দ বিপর্য ঘটেছে। যা ছন্দে আনতে যেকোন মূলে বা উপায়েই বলুন কেনো প্রত্যেক শ্রেণির প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ক্লাসে আনার প্রয়োজনী ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে শুরুতে পর্যবেক্ষন করার জন্য সরকারের গৃহিত সিদ্ধান্ত গঠনমূলক। তবে তা যেনো দীর্ঘ না হয়।দেশের শহর অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভৌত অবকাঠামে গিজগিজে হলেও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভৌত অবকাঠামো ঠাসা-ঠাসি হলেও গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোর ভৌত অবকাঠামো যথেষ্ট উন্নত,মানসম্মত ও প্রশ্বস্ত। ফলে একসাথে সকল শ্রেণির ক্লাস স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসানো সম্ভব। বর্তমান সরকার টানা প্রায় একযুগে শিক্ষায় সেবায় এই পরিবেশ নিশ্চিত করতে পেরেছেন। তবে নদী ভাঙ্গন এবং দুর্গম অঞ্চলের বিষয়টি ভিন্ন। আমরা সরকার শিক্ষাদুয়ার খোলার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি, একই সাথে সকল শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাসে বসানোর প্রয়োজনী পদক্ষেপ গ্রহণে'র অনুরোধ করছি।

লেখক : শিক্ষক ও নাট্যকার।