ইমরান হোসাইন, সিরাজগঞ্জ : চলতি বন্যায় পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে তাঁতকুঞ্জ হিসেবে পরিচিত সিরাজগঞ্জের হাজারো তাঁত কারখানা। পানিতে ডুবে যাওয়াও নষ্ট হচ্ছে সুতা ও তাঁত মেশিনের যন্ত্রপাতি। ফলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন তাঁত মালিকেরা। একই সাথে কারখানায় পানি উঠে পড়ায় কাজ না পেয়ে বেকার হয়ে রয়েছেন তাঁতশ্রমিকসহ এই শিল্প সংশ্লিষ্ঠ লক্ষাধিক মানুষ। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। বন্যা শেষে নতুন করে এই শিল্পটিকে দাড় করাতে সরকারি প্রনোদনা ও স্বল্পসুদে ঝনের দাবি তাঁত মালিক ও ব্যাবসায়ি নেতাদের। 

তাঁতকুঞ্জ হিসেবে পরিচিত সিরাজগঞ্জ জেলার ৫ লক্ষাধিক পাওয়ারলুম ও হ্যান্ডলুম মেশিনে তাঁতপণ্য তৈরি হয়। চলতি বন্যায় জেলার তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরের হাজার হাজার তাঁত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। পানি উঠে পড়ায় বন্ধ হয়ে গেছে বন্যা কবলিত এলাকার অধিকাংশ কারখানা। পানিতে নিমজ্জিত থাকায় তাঁত কারখানার সুতা প্রস্তুত করার ভিম, লোহার ল্যাংগোজ, মেশিনের পায়া ও ইলেকট্রনিক মটরে মরিচা ধরছে, পচন ধরায় নষ্ট হয়ে গেছে সুতাও। বন্যা শেষে তাঁত কারখানা চালু করতে আবারো নতুন করে সুতা ক্রয় ও ভিম তৈরি করতে হবে তাঁতমালিকদের, সংস্কার ও পরিবর্তন করতে হবে পাওয়াররুম-হ্যান্ডলুমের মুল্যবান যন্ত্রপাতি। ফলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন তাঁত ব্যাবসায়িরা। পুনরায় কারখানা চালু করতে প্রয়োজনীয় পূজি’র জোগান নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁত মালিকেরা।

সুতা প্রক্রিয়াজাতকরন, নকশা তৈরিসহ তাঁত মেশিনে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা তৈরিতে প্রতিদিন কাজ করেন অন্তত ১০ লক্ষ শ্রমিক। শ্রমিকদের কর্মতৎপরতায় মুখরিত থাকে তাঁতশিল্প এলাকা। কিন্তু চলমান বন্যায় পানি উঠে পড়ায় বন্ধ হয়ে গেছে হাজার হাজার তাঁত কারখানা, ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এই সব শ্রমিকেরা। প্রায় ১৫ দিন যাবৎ বেকার থাকা নিম্ন আয়ের শ্রমিকেরা বিপাকে পড়েছেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কারখানা মালিকেরা লোকসানে থাকায় আর্থিক সহযোগিতা করছেনা, মিলছে না সরকারি-বেসরকারি ত্রান সহায়তা, এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বন্যাকবলিত তাঁত শ্রমিকেরা। অনেকেই পরিবারের ব্যায় নির্বাহে মাছ ধরা, নৌকা চালানোসহ বিকল্প কাজ করে উপার্জনের চেষ্টা করছেন।

তাঁত শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ দিন যাবৎ কাজ নেই, কারখানা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ফলে আমরাও বেকার হয়ে রয়েছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। এখনো কোন ত্রান বা সহযোগিতা পাইনি।

তাঁত শ্রমিক শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, তাঁত কারখানায় পানি উঠে পড়েছে, বেকার হয়ে রয়েছি আজ প্রায় ১৫ দিন। তাঁত মালিক নিজেও অভাবে আছে ফলে টাকা চেয়েও পাচ্ছি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে হবে তাই বাধ্য হয়ে নৌকা চালাচ্ছি।

তাঁত মালিক শামসুল ইসলাম বলেন, পানিতে নিমজ্জিত থাকায় তাঁত কারখানার সুতা প্রস্তুত করার ভিম, লোহার ল্যাংগোজ, মেশিনের পায়া ও ইলেকট্রনিক মটরে মরিচা ধরছে, পচন ধরায় নষ্ট হয়ে গেছে সুতাও। বন্যা শেষে তাঁত কারখানা চালু করতে আবারো নতুন করে সুতা ক্রয় ও ভিম তৈরি করতে হবে। এই টাকা কোথায়, কিভাবে কারখানা চালু করবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ সূর্য্য জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিক ও মালিকদের আর্থিক প্রনোদনা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসন ও তাঁত বোর্ডের মাধ্যমে বন্যা কবলিত তাঁত কারখানার তালিকা করা হচ্ছে। একই সাথে বন্যা শেষে পুনরায় কারখানা চালু করতে স্বল্পসুদে ঝন পাওয়ার জন্য মালিকদের পাশে থাকবে চেম্বার অব কমার্স।

করোনা ও লকডাউনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বন্যায় আবারো বিপাকে তাঁত মালিক ও শ্রমিকেরা। জেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা সম্ভাবনাময় শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠরা।

(আই/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২১)