সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তে প্রতিদিন আটক হচ্ছে ইলিশ মাছ
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : অবৈধভাবে ভারতে পাচারকালে বুধবার ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার শাঁখরা-কোমরপুর সীমান্ত থেকে একটি ট্রাকসহ ৩০ মন ইলিশ আটক করেছে বিজিবি। অভিযোগ, আটককৃত মাছ শুল্ক কর্মকর্তাকে না জানিয়ে নামমাত্র টাকায় অবৈধ নিলাম দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট চোরকারবারির হাতে তুলে দিয়ে রাজস্বের মোটা টাকা লুটপাট করে খাচ্ছে বিজিবি।
সীমান্ত গ্রামবাসি জানায়, সাতক্ষীরা শহরতলীর মিলবাজার এলাকার ‘সাজাব যতনে এন্টারপ্রাইজ’ প্রতিষ্ঠানের মালিক কুখ্যাত চোরাচালানি জাহাঙ্গীর হোসেন একটি ট্রাকে করে ৩০মন ইলিশ ভারতে পাচারের উদ্যোগ নেয়। খবর পেয়ে শাঁখরা কোমরপুর বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার আসাদের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা বুধবার ভোরে শাঁখরা- কোমরপুর বাজার এলাকার ব্রীজের উপর থেকে ওই ট্রাক আটক করে। ওই ট্রাক থেকে ৩০টি কার্টুনে ৩০ মন ইলিশ থাকলেও বিজিবি ২২ মন বলে নিশ্চিত করে। এসময় চোরাচালানিরা পালিয়ে যায়। ট্রাকটির মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন নিজেই। পরে ওই মাছ শুল্ক বিভাগের সহকারি কমিশনার আবুল কাশেম, বসন্তপুর কাস্টমস কর্মকর্তা নাসিরউদ্দিন ও সরকারি নিলাম ক্রয় সংস্থা এসটি ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী জাহিদ হোসেনকে না জানিয়েই এক হাজার টাক কেজি দরের ইলিশ মাছ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আমেনার রহমান ও বাবুর মাধ্যমে চার লাখ ৭৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে সংশ্লিষ্ট চোরাকারবারি জাহাঙ্গীর হোসেনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এমনকি মাছ বহনকারি ট্রাকের মালিকের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়নি কোন মামলা। মাছ নিলামে কম দামে বিক্রির সংযোগ করে দেওয়ার জন্য বিজিবি’র কোমরপুর- শাঁখরা বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদারকে এক লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
কোমরপুর গ্রামের আব্দুর রউফ (এক সময়কার র্যাবের সোর্স) জানান, শাঁখরা- কোমরপুর বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার আসাদ মঙ্গলবার ভোরে কুলিয়া এলাকা থকে ২০ মন, গত ৮ সেপ্টেম্বর কুলিয়া এলাকা থেকে ১৫ মান, গত ৫ সেপ্টেম্বর বহেরা এলাকা থেকে ২০ মন ইলিশ মাছ ও গত ২ সেপ্টেম্বর শশাডাঙা সীমান্ত থেকে একটি এলজিডি মনিটর আটক করে। ওই সব ইলিশ মাছ এক হাজার টাকার স্থলে নামমাত্র ২৮০ টাকা কেজি দরে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে চোরাকারবারি জাহাঙ্গীর হোসেনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। অথচ কখনো মাছ বসন্তপুর কাস্টমস এ বা মাছ বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে পাঠানো হচ্ছে বলে প্রচার দেওয়া হচ্ছে। আটককৃত এলজিডি কালার মনিটরটি কাস্টমসে জমা দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি। আটককৃত মাছের একটি অংশ বিজিবি অস্বীকার করে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বসন্তপুর কাস্টমস গুদাম কর্মকর্তা মো. নাসিরউদ্দিন জানান, সম্প্রতি কোন ইলিশ মাছ ও এলজিডি মনিটর আটকের কথা কোমরপুর-শাঁখরা বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার আসাদ তাকে জানাননি। তবে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে আটককৃত মাছ কম দামে নিলাম করিয়ে সংশ্লিষ্ট চোরকারবারির কাছে চলে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
সরকারি নিলাম ক্রয়ের প্রতিষ্ঠান এসটি ইন্টারন্যাশনালের স্বতাধিকারী জাহিদ হোসেন জানান, সম্প্রতি শাঁখরা -কোমরপুর বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার আসাদ ইলিশ মাছ আটক করে নিয়ম বহির্ভুতভাবে স্থানীয় ব্যবসায়িদের কাছে বিক্রি করছেন বলে স্থানীয় লোকজন ও পত্রিকার মাধ্যমে তিনি জেনেছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।
সাতক্ষীরা শুল্ক বিভাগের সহকারি কমিশনার আবুল কাশেম জানান, কাস্টমস আইনের ১৫ ও ১৬ ধারা লঙ্ঘন করে কোন মাল পাচারের আওতায় পড়লে তা নিয়ম অনুযায়ি কাস্টমসে জমা হওয়ার কথা। সে মাল পচনশীল হলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে তা নিলাম বিক্রি করতে হবে।
সেক্ষেত্রে সরকারি নিলাম ক্রয়-বিক্রয় সংস্থা এসটি ইন্টারন্যাশনালই ওই মাল কিনতে পারবে। তিনি স্থানীয়ভাবে বিজিবি’র এ ধরনের ইলিশ নিলাম বিক্রির কথা সম্পূর্ণ বেআইনি বলে উল্লেখ করে বলেন, এতে বিজিবি’র সঙ্গে চোরাকারবারিদের যোগসাজসের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এতে সরকার বহু টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
শাঁখরা- কোমরপুর বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার মো. আসাদ চোরাচালানকারিদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কম দামে মাছ বিক্রি করে সংশ্লিষ্ট চোরাচালানিদের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, নিলামকৃত মাছের টাকা ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টারের মাধ্যমে কাস্টমসে জমা দেওয়া হয়।
বিজিবির ৩৪ ব্যাটেলিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল শামসুল কবির জানান বুধবার ভোরে কোমরপুর এলাকা থেকে ২২মণ ইলিশ আটক করা হয়েছে। ওই মাছ চার লাখ ৭৭ হাজার টাকায় নিলাম বিক্রি করা হয়েছে। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে নিলাম বিক্রি করার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
(আরেক/এএস/সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৪)