সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসিনতার সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারীরা নিষিদ্ধ রিং জাল/ম্যাজিক জালে মাছ নিধনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়সহ সর্বত্র চায়না ম্যাজিক জাল/রিং জালের ছড়াছড়ি। এতে করে স্থানীয় প্রজাতির সবধরনের মাছ বিলুপ্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এসব চায়না ম্যাজিক জালের ফাঁদ পেতে নির্বিচারে রেনু পোনা থেকে শুরু করে সব ধরনের মা মাছ, এমন কী সব ধরনের জলজপ্রাণী শিকার করা হচ্ছে। ফলে উজাড় হচ্ছে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মৎস্য সম্পদ। ভয়ংকর এ জালের ব্যবহার বন্ধ না হলে, মাছের পাশাপাশি কুচিয়া, ব্যাঙ, সাপসহ এ-ধরণের জলজপ্রাণীও বিলুপ্তির আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।

এই বিষয়ে স্থানীয় পেশাদার জেলেরা জানান, চায়নার ম্যাজিক জাল এক ধরনের বিশেষ ফাঁদ। এই জালে ছোটো ছোটো রেনু পোনাসহ সব ধরনের মাছ এবং জলজপ্রাণী ছেঁকে উঠে আসে। আর এই জালের দাম কম হওয়ায় এবং বেশি মাছ শিকারের নেশায় সর্বত্র মৌসুমি মৎস্য শিকারীরা মাছ ধরতে এই জাল ব্যবহার করছে। ফলে আমরা যারা চিরাচরিত কৌশল দিয়ে মাছ ধরতাম তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে এই জাল কিনেছে, কেউ কেউ কিনতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

সচেতন মহল ও কুলিয়ারচর মৎস্য আড়ৎ ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত অর্ধশত জেলে ছোটো ছোটো ডিঙি নৌকায় এসব জাল পাড়ে তুলে আনে। এসময় জালে ধরা পড়ে দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় সব মাছ এবং নদীতে থাকা সব ধরনের জলজপ্রানী। ফলে মৎস্য শিকারীরা এই জালে মাছে শিকারে সাময়িক ভাবে উপকৃত হলে, স্থায়ীভাবে নিজেরাসহ দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিং জাল দিয়ে মাছ শিকার করা জেলে বলেন, জানি এই জাল দিয়ে মাছ ধরা ঠিক না। তারপরও বেশি মাছের আশায় এবং জীবিকার তাগিদে মাছ ধরছি। তাছাড়া সর্বত্রই এই জালের ছড়াছড়ি, কিন্তু কেউতো কিছু বলছে না।

এই বিষয়ে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউল হক জুয়েল বলেন, এই জাল ব্যবহারের ক্ষতিকারক দিকগুলো নিয়ে জেলের মধ্যে প্রচারণা চালিয়েও তেমন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা খুব শীঘ্রই এসবের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে, এসব জাল দিয়ে মাছ নিধনকারী জেলেদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১)