ইমরান হোসাইন, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার চলনবিলে অনুষ্ঠিত হলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি নৌকাবাইচের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় ছিপ, কোষা ও পানসি বিভাগে অংশ নেয়া অন্তত ৩০টি নৌকার মাঝে বিজয়ী হন ‘বাগচি চ্যালেঞ্জার, নাসির এক্সপ্রেস ও বাংলার বাঘ’। ঐতিহ্যবাহি নৌকা বাইছ প্রতিযোগিতার নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন নানা বয়সী হাজারো নারী-পুরুষ। সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের জেলা থেকে আসা বাহারি নৌকার বাইছ আর মানুষের করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চলনবিলের এই অংশ।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার চলনবিলে সড়াতৈল গ্রামবাসির উদ্যোগে প্রতিবছরেই বর্ষা মৌসুমে আয়োজন করা হয় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার চুড়ান্ত বাইছ অনুষ্ঠিত হলো শুক্রবার বিকেলে।

সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরের ‘মদিনা এক্সপ্রেস, উড়ন্ত বলাকা, করম আলী এক্সপ্রেস, ‘বাগচি চ্যালেঞ্জার, সোনার তরি, নাসির এক্সপ্রেস, বাংলার বাঘ’ ‘সুপার সনিক’সহ বাহারি নামের অন্তত ৩০ টি ছিপ, কোষা ও পানসি নৌকা অংশগ্রহন করে এবারের প্রতিযোগিতায়। এর মধ্যে তিনটি বিভাগে বিজয়ী হন ‘বাগচি চ্যালেঞ্জার, নাসির এক্সপ্রেস ও বাংলার বাঘ’। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরসহ আশ-পাশের জেলা-উপজেলার হাজার হাজার মানুষ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে ছুটে আসেন চলনবিলে।

ঐতিহ্যবাহি নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার স্থান চলনবিলের শাহজাদপুর অংশ সেজে উঠেছিল রঙ্গিন সাজে। ‘মদিনা এক্সপ্রেস, উড়ন্ত বলাকা, করম আলী এক্সপ্রেস, ‘বাগচি চ্যালেঞ্জার, সোনার তরী, নাসির এক্সপ্রেস, বাংলার বাঘ’ ‘সুপার সনিক’সহ বাহারি নামের নৌকা ছুটে চলেছে নদীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। সাথে সাথে ছুটছে যাত্রিবাহি শত শত ইঞ্চনচালিত নৌকা, নৌকায় থাকা দর্শকের করতালি, বাইছালদের বৈঠার আওয়াজ, দেশাত্ববোধক গান আর করতালিতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে। ঐতিহ্যবাহি নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে নদীপাড়ে উপস্থিত হয়েছিল বিভিন্ন বয়সী হাজারো নারী-পুরুষ। শান্তিপুর্ন ও সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিযোগিতাটি শেষ হওয়ায় সকলকে ধন্যবাদ জানান আয়োজকেরা। মানুষকে বিনোদনের সুযোগ দিতে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহি নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা প্রতিবছরেই আয়োজন করা হবে বলেও জানান তারা।

নৌকাবাইচ দেখতে আসা রকিব উদ্দিন জানান, ঐতিহ্যবাহি নৌকাবাইচ উপভোগ করতে এসেছি পরিবার নিয়ে, করোনাকালে অনেকদিন এমন নির্মল আনন্দ থেকে বঞ্চিত ছিলাম আমরা। আমাদের দাবি প্রতিবছরেই এ ধরনের আয়োজন করা হোক।

নৌকাবাইচ দেখতে আসা নারী দর্শক শায়লা আক্তার শেলি জানান, কোনদিন এভাবে নৌকাবাইচ দেখা হয়নি, পরিবারের সবার সাথে খুব আনন্দ হচ্ছে বাইচ দেখে।

শাহজাদপুরের কায়েমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউল আযম ঝুনু জানান, আমি আয়োজক সড়াতৈল গ্রামবাসিকে ধন্যবাদ জানাই গ্রামীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ ধরনের নৌকা বাইচ আয়োজন করার জন্য। আশা করি ভবিষ্যতেও মানুষকে বিনোদন দিতে এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকবে।

নৌকাবাইচ আয়োজক কমিটির সভাপতি নবীর হোসেন প্রামানিক প্রতিযোগিতাটি সুষ্ঠ ও শান্তিপুর্নভাবে সমাপ্ত করতে সহযোগিতা করায় সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়েছে, গ্রামবাসির এই আয়োজন আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।

নৌকা বাইচ চুড়ান্ত প্রতিযোগিতায় ছিপ, কোষা ও পানসি তিন বিভাগে বিজয়ীদের হাতে দুইটি মোটরসাইকেল ও একটি ফ্রিজ তুলে দেন আয়োজক কমিটি। এছাড়া অংশ নেয়া প্রতিটি নৌকার মালিকদের দেয়া হয়ে একটি করে টেলিভিশন পুরস্কার।

(আই/এসপি/সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১)