প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : মাছে-ভাতে বাঙলি। ভাতের সাথে তরকারি হিসেবে প্রধান তরকারি মাছ থাকলেই যেন আর কিছু প্রয়োজন হয় না। পেট ভরে খাওয়া হয়ে যায়। সেই মাছ যদি হয় নিজের পুকুর কিংবা ডোবায়। তাহলে আর কোন সমস্যা নেই। আর যদি সেই মাছ বন্যা কিংবা নদী ভাঙনে পানিতে ভেসে যায় তাহলে কপালে হাত পড়ে। সারা বছরেই যেন ভাতের সাথে আর মাছ মেলে না। তাই বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে প্রত্যন্ত পল্লী ও নদী ভাঙন প্রবন এলাকায় খাঁচায় মাছ চাষ করে মৎস্য চাষীরা। এতে লাভবান হওয়ায় অন্যান্যদের মাঝেও আগ্রহ বাড়ছে। ফলে উপজেলার অনেক এলাকায় এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছে চাষীরা।

শনিবার (১১সেপ্টেম্বর) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বন্যা কিংবা নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরে গাবুরহেলান গ্রামে খাঁচায় মাছ চাষ করে মৎস্যচাষী সমবায় সমিতির ২০ জন সদস্য। যৌথভাবে তিস্তা নদীর তীরে মুক্ত পানিতে খাঁচায় তেলাপিয়া মাছ চাষ করেছেন তারা। রঙ্গিন নেট জাল বেষ্টিত প্লাস্টিকের ড্রাম, বাঁশ ও লোহার পাইপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছোট ছোট খাঁচা। খাঁচার ভিতরে চাষ করা হচ্ছে হাইব্রিড তেলাপিয়া মাছ।

গত বছর পরিক্ষামূলক তেলাপিয়া মাছ খাঁচায় চাষ করেন সমিতির সদস্যবৃন্দ। পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা না থাকায় জাল ছিড়ে অনেক মাছ নদীতে চলে যায়। তাছাড়া খাঁচার সংখ্যা কম থাকায় তেমন লাভ করতে পারেনি বলে মৎস্যচাষীরা জানান। এবছরের শুরুতে সমিতির সভাপতি ফৈজুর রহমান রাজারহাট উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামের নিকট সরকারী সহায়তার জন্য আবেদন করলে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সাড়ে তিন লক্ষ টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয় সমিতিকে। এছাড়াও ১২.৫ মণ তেলাপিয়া মাছের পোনা ও মাছের খাদ্য হিসেবে ২ টন ফিড সমিতিকে দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে ২০টি খাঁচা তৈরি করে মাছ চাষ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিদ্যানন্দ খাঁচায় মৎস্যচাষী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি ফৈজুর রহমান বলেন,আটষট্টি হাজার টাকা দিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করি। সরকারী সহায়তা পেয়ে আমরা উপকৃত হয়েছি। এবছর খাঁচায় চাষ করা মাছ বিক্রি করে দুই লক্ষাধিক টাকা লাভ হবে বলে আশা করছি। তবে সমিতির সদস্য সংখ্যা ২০জন হওয়ায় লাভের ভাগ বেশী হবে না। তাই আমি সরকারের কাছে জোর আবেদন করি আমার সমিতিকে আগামী অর্থ বছরে যেন বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেন। তবেই ২০টি পরিবার সাবলম্বী হতে পারবো। খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি দেখতে জেলা- উপজেলা থেকে প্রতিদিন লোকজন আসছে। এ পদ্ধতি অবলম্বন করে ইতোমধ্যে উপজেলা ঘড়িয়াডাঙ্গা, ছিনাই, নাজিমখান ও রাজারহাট সদর এলাকায়ও মৎস্যচাষীরা মাছ চাষ শুরু করছে।

এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুল আলম বলেন, আমি খাঁচায় মাছচাষ পরিদর্শনে কয়েকবার গাবুর হেলানে গিয়েছি ওখানে আমি মৎস্যচাষীদের মধ্যে একটা সম্ভবনা দেখতে পেয়েছি। ইতিমধ্যে আমার দপ্তর থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা, সাড়ে ১২ মণ তেলাপিয়া মাছের পোনা ও মাছের খাদ্য হিসেবে ২ টন ফিড সরকারী সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সমিতির ২০টি পরিবার যাতে খাঁচায় মৎস্যচাষ করে সাবলম্বী হতে পারে সে বিষয়ে আমার উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে তাদের সব ধরনের সহযোগীতা করার চেষ্টা করবো।

(পিএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১)