মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে সরকারি নির্দেশনায় সারাদেশের ন্যায় শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমায় দেড় বছর পর রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে স্বশরীরে পাঠদান শুরু করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সময় ফুল দিয়ে বরণ করে নেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। শরীরের তাপমাত্রা মাপার পর প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সাবান দিয়ে হাত ধুইয়ে স্যানিটাইজার ব্যবহার করে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করানো হয়। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরুর আগে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়। 

আনন্দের মাঝে বেদনাও আছে। অতি বন্যা কবলিত কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বিরত রাখা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু করা হবে। ক্লাসরুম পানির নিচে থাকায় বিকল্প হিসেবে বসতবাড়ির উঠান ও বসত ঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে না যাওয়ায় বেশ কিছু স্কুলে পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছেনা। সেসব স্কুলের আশপাশের বাড়ির উঠান ও বসত ঘরে কোন রকমে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বাসাইল উপজেলার রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম এখনও প্রায় তিন ফুট পানির নিচে। তাই পাশের বাড়ির উঠান ও বসত ঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুসনেআরা আক্তার পপি জানান, তার স্কুলে ১১০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুলটি পানির নিচে থাকায় এবং চলাচলের রাস্তায় পানি থাকায় সব শিক্ষার্থী স্কুলে আসেনি। তবে ৭০-৭২ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হয়।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, রোববার টাঙ্গাইলে দুই হাজার ৪২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরু হয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার ৬২৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৭৯৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফুলসহ নানা আয়োজনে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাস্কসহ করোনা প্রতিরোধক সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মাস্ক পড়াসহ শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন কঠোরভাবে নজরদারীতে রেখেছেন শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরা সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করছেন।

বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. তাহমিনা বেগম জানান, শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি শতকরা ৯৫ ভাগ। সরকারি নির্দেশনা অনুসারে বিভিন্ন ভাগে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সবার পরিবারের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তাদের বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর পরিবার করোনামুক্ত বলেও জানান তিনি।

বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল করিম জানান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শ্রেণি কক্ষে সশরীরে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সন্তোষজনক। র্দীঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার পর স্কুল খুলে আজ আমরা আনন্দিত। শিক্ষার্থীদের হাসিমুখ দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ জানান, টাঙ্গাইলের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শ্রেণি কক্ষে সশরীরে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ভালো। বন্যা কবলিত কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বিরত রাখা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু করা হবে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম জানান, সারাদেশের ন্যায় টাঙ্গাইলের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও রোববার শ্রেণি কক্ষে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। তবে পাঁচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করায় পাঠদানযোগ্য নয়।

(এসএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১)