রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মহাদেব সরকারের বিরুদ্ধে জামায়াত কর্মী বাবুর আলীর দায়েরকৃত পরিকল্পিত মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। শনিবার মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পিবিআই এর উপপরিদর্শক ইব্রাহীম হোসেন তার অফিসে বাদি ও সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। একইভাবে রবিবার দুপুরে মামলার আসামী মহাদেব সরকারের পক্ষে কাগজপত্র গ্রহণ করেন।

ঝিটকি গ্রামের মহাদেব সরকার জানান, খানপুর গ্রামের বাবুর আলীর দু’ বিঘাসহ ৪৮ বিঘা জমি লীজ নিয়ে ২০১৭ সাল থেকে তিনি ঝিটকি গ্রামে মাছের চাষ শুরু করেন। বছর না ঘুরতেই বাবুর আলী তার ঘের দখলে নেওয়ার জন্য নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে বাবুর আলী তার স্ত্রী খলেদা খাতুন, ভাই জলিলের স্ত্রী মঞ্জুয়ারা খাতুনকে দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যথাক্রমে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি ও ২৭ জানুয়ারি পৃথক ধর্ষণের চেষ্টার মামলা করে। তদন্তে সত্যতা না পাওয়ায় মামলা খারিজ হয়ে যায়। ওই বছরের ১৪ জুন খালেদাকে দিয়ে মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হত্যার চেষ্টার মামলা করিয়ে তদন্ত ছাড়াই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করানো হয়।

একই দিসে ভাইপো বাপ্পি হোসেনকে দিয়ে মারপিটের মামলা করানো হয়। তদন্তে মামলা খারিজ হয়ে যায়। তাতেও সুবিধা করতে না পেরে বাবুর আলীর নেতৃত্বে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা তার ঘেরের বাসায় হামলা করে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। ভাঙচুর করে লুটপাট করা হয় ঘেরের বাসা। লুট করা হয় ৫০ হাজারের বেশি টাকার মাছ। এ মামলা চলমান রয়েছে। একের পর এক হামলা ও মামলা সহ্য করতে না পেরে তিনি ২০২০ সালে ওই জমি শহরের কামাননগরের জাহিদ হাসান ও ইব্রাহীমের কাছে লিজ দেন। এতে ক্ষুব্ধ ছিলেন বাবুরালী। এরপর তাকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় তিনি বাবুর আলীর বিরুদ্ধে থানায় দু’টি সাধারণ ডায়েরী করেছেন।

এ ছাড়া তাকে (মহাদেব) হত্যা চেষ্টার মামলার সাজা হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকট হয়ে ওঠায় বাবুরালি তাকে ও তার ভাই জয়দেব সরকারসহ প্রতিপক্ষ ১১ জনের বিরুদ্ধে গত ১৫ জুন কাল্পনিক ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবিতে ঘেরের বাসায় তার উপর হামলা চালিয়ে ৪৫ হাজার টাকা লুটপাট, মারপিট, গত ২০ আগষ্ট একই ঘরের বাসায় তার উপর হামলা চালিয়ে মারপিট ও ৯০ হাজার টাকার মাছ লুটের অভিযোগ এনে গত ২৪ আগষ্ট আদালতে তাকেসহ ১১জনের বিরুদ্ধে মামলা(সিআর -৬৫২/২১) দায়ের করেছেন। এত মার খেয়েছেন তিনি যে কোথায় তার চিকিৎসা নেওয়া লাগেনি।

এ ছাড়া প্রায় সব কয়টি মামলায় তিনি তারই প্রতিপক্ষ ঝিটকি গ্রামের লুৎফর রহমান, তার ভাইপো ও ভাইদের সাক্ষী করেছেন। জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মীর খুঁটির জোর কোথায় জানতে চান তিনি। মামলার তদন্তভার পিবিআই এর উপর ন্যস্ত করে আগামী ২৭ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তার কাছে বাবুর আলী তাকে সংখ্যালঘু হিসেবে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার ব্যাপারে যে বক্তব্য তুলে ধরে সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করেছেন রোববার পিবিআই অফিসে যেয়ে তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ইব্রাহীম হোসেন জানান, মামলার বাদি, স্বাক্ষী, নিরপেক্ষ সাক্ষী ও আসামী পক্ষের সঙ্গে কথা বলে আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১)